আপনারা আপনাদের ওজন কাঙ্খিত মাত্রায় নিয়ে আসতে পারবেন তবে সাথে অবশ্যই ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা এক্সারসাইজ আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে।ওজন কমানোর জন্য আমাদের খাদ্য তালিকা সঠিক ও পরিমিত হতে হবে। এটি শুধুমাত্র কম ক্যালোরি গ্রহণ নয়, বরং পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে হতে হবে। এছাড়া নিয়মিত ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য তালিকায় তিনটি প্রধান বিষয় মেনে চলা উচিত: খাবারের টাইমিং, খাবারের কোয়ালিটি এবং খাবারের পরিমাণ।
খাবারের টাইমিং
ওজন কমাতে হলে সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত।
সকালের নাস্তা: সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে। দেরি করে নাস্তা করলে ওজন কমানো কঠিন হয়ে পড়ে।
দুপুরের খাবার: দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে।
রাতের খাবার: সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে। রাতের খাবার দেরি করে খেলে শরীরের মেটাবলিজম স্লো হয়ে যায়, যা ওজন কমানোতে বাধা সৃষ্টি করে। এতে খাবারের ক্যালরি জমা হতে শুরু করে, যা ওজন বাড়িয়ে দেয়।
খাবারের কোয়ালিটি
ওজন কমানোর জন্য খাদ্যের গুণগতমান গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে হবে এবং নিম্নমানের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তাই খাওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার খাওয়া জরুরি।
প্রোটিন: প্রোটিন শরীরের পেশী গঠনে সহায়ক এবং ক্ষুধা কমায়। প্রোটিনের জন্য ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ডাল ও বাদাম খাওয়া যায়।
শাকসবজি: সালাদ, শাক এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি। শাকসবজি এবং ফলের মধ্যে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার থাকে। এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা কম রাখতে সাহায্য করে।
ফল: আপেল, কলা, কমলা ইত্যাদি।
কার্বোহাইড্রেট: কার্বোহাইড্রেট শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। তবে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত কার্বোহাইড্রেট যেমন বাদামী চাল, ওটস, কুইনোয়া খাওয়া উচিত
খাবারের পরিমাণ
খাবারের পরিমাণ সঠিকভাবে মেপে খাওয়া উচিত। ওজন কমানোর জন্য দৈনিক ১০০০ থেকে ১২০০ ক্যালোরি গ্রহণ করা যেতে পারে। অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়বে, আবার কম খেলে পুষ্টির অভাব দেখা দেবে।
খাদ্য তালিকা
সকালের নাস্তা:
একটি মাঝারি সাইজের আটার রুটি (তেল ছাড়া তৈরি)
একটি ডিম অথবা সবজি
একটি ফল (যেমন: আপেল বা কলা)
দুপুরের খাবার:
এক প্লেটের চার ভাগের এক ভাগ ভাত বা একটি রুটি
এক পিস মাছ বা মুরগি
প্রচুর সবজি এবং সালাদ
বিকেলের নাস্তা:
এক মুঠো বাদাম (যেমন: আমন্ড বা আখরোট)
কম চর্বিযুক্ত দই
রাতের খাবার:
এক প্লেটের চার ভাগের এক ভাগ ভাত বা একটি রুটি
এক পিস মুরগি বা মাছ
প্রচুর সবজি এবং সালাদ
অতিরিক্ত টিপস
পানি পান: পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এটি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।
বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা: রেস্টুরেন্ট বা ফাস্টফুডের খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলোতে উচ্চ ক্যালোরি এবং তেল থাকে যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।
ব্যায়াম: প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। এটি ওজন কমাতে সহায়ক।
ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান। পর্যাপ্ত ঘুম ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ওজন কমানোর জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি থাকা উচিত এবং নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া উচিত। সঠিক টাইমিং, কোয়ালিটি এবং পরিমাণ মেনে চললে ওজন কমানো সহজ হবে এবং আপনি সুস্থ থাকবেন। প্রতি মাসে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন কমানো স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর। সুতরাং, অত্যন্ত দ্রুত ওজন কমানোর চেয়ে ধীরে ধীরে ওজন কমানো অধিক কার্যকর ও স্বাস্থ্যকর। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার কাঙ্ক্ষিত ওজন অর্জন করতে পারেন। সারাজীবন এভাবে খেলে আপনার ফিজিক্যাল ফিটনেস নিউট্রিশন এভরিথিং ম্যানেজ হবে আপনার ভয়ের কোন কারণ নাই । ধন্যবাদ সবাইকে।
ডা. গোলাম মোর্শেদ
এমবিবিএস, এফসিপিএস (কার্ডিওলজি), এমআরসিপি (ইউকে)
সহকারী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি