টেস্টোস্টেরন হলো একটি প্রধান পুরুষ যৌন হরমোন, যা এন্ড্রোজেন নামক হরমোন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। যদিও মহিলাদের শরীরেও এটি কম পরিমাণে উৎপন্ন হয়, তবে পুরুষদের শরীরে এটি প্রধানত অণ্ডকোষ এবং আংশিকভাবে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়। টেস্টোস্টেরন পুরুষের শারীরিক, মানসিক এবং যৌন স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
টেস্টোস্টেরনের প্রয়োজনীয়তা
যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য: টেস্টোস্টেরন পুরুষের যৌনাঙ্গের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুক্রাণু উৎপাদন, যৌন ইচ্ছা এবং লিঙ্গের শক্তির জন্য অপরিহার্য। টেস্টোস্টেরন পুরুষের যৌন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখে।
পেশি ও হাড়ের গঠন: টেস্টোস্টেরন পেশি ও হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। এটি প্রোটিনের সংশ্লেষণ বৃদ্ধি করে, যা পেশির বিকাশে সহায়ক হিসাবে কাজ করে। এছাড়া, এটি হাড়ের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
শারীরিক কার্যকারিতা: টেস্টোস্টেরন রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়ায়, যা শারীরিক কার্যক্ষমতা ও স্থায়িত্ব বাড়ায়। এটি শারীরিক শক্তি ও স্ট্যামিনা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মানসিক স্বাস্থ্য: টেস্টোস্টেরন মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং মনোবল বাড়ায়। এটি আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং মানসিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ ভূমিকা পালন।
এ ছাড়াও টেস্টোস্টেরন আমাদের অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন তার অন্যতম: টেস্টোস্টেরন আমাদের এনার্জি, স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ বৃদ্ধি করে। আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে সহযোগিতা করে। কাজ করার সক্ষমতা বাড়ায়, গলার স্বরের গম্ভীরতা বাড়ায়, মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে, পুরুষের মত আচরণ, যৌন ক্রিয়ার জন্য পর্যাপ্ত আমিষ সরবরাহ করে, স্বাস্থ্যকর মেটাবলিজম উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে সম্ভাব্য সমস্যা
যৌন স্বাস্থ্য সমস্যা: টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির কারণে যৌন ইচ্ছা কমে যায়, যৌন অক্ষমতা এবং শুক্রাণু উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এতে পুরুষের যৌন জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শারীরিক দুর্বলতা: টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি পেশি ক্ষয় এবং শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে। এটি পেশির শক্তি হ্রাস করে এবং দৈহিক কার্যক্ষমতা কমায়।
হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া: টেস্টোস্টেরনের অভাবে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, যা অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এতে হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায় এবং হাড় ভাঙার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মানসিক সমস্যা: টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করতে পারে। এটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্নক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শরীরের চর্বি বৃদ্ধি: টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি শরীরের চর্বি বৃদ্ধি করতে পারে এবং মেটাবলিজম কমিয়ে দেয়। এতে ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এছাড়াও ক্লান্তিভাব, বিষণ্ণতা বেড়ে যায়, স্মৃতি শক্তি ও মনোযোগ কমে যায়। অতিরিক্ত অস্থিরতা হতে পারে। পুরুষালি আচরণ কমে যায়, আচরণে মিনমিনে ভাব আসে। স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়াতে আগ্রহ না থাকা। দ্রুত বীর্যপাত, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। মেরুদণ্ডে ব্যথা হতে পারে। শরীরে চর্বি হয়ে যেতে পারে। হাড় ক্ষয় হতে পারে সাথে চুল পড়ে যেতে পারে।
২০০৩ সালে, হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকা ও টেস্টোস্টেরনের পরিমাণের উপর এর প্রভাব নিয়ে পুরুষদের উপর একটা পরীক্ষা চালানো হয়। তার ফলাফলে দেখা যায় যে, হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকার প্রথম ১ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এরপর আরেকটা বড় ‘কিন্তু’ আছে তা হলো ষষ্ঠ আর ৭ম দিনে এই বৃদ্ধির হার হয়ে যায় ১৪৭%!!!! এই ৭ দিনের পরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ তার স্বাভাবিক পর্যায়ে যায়।”এথেকে আমরা বুঝতে পারছি যে টেস্টোস্টেরন আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটাকেই আমারা হস্তমৈথুন বা অন্য কোন মাধ্যমে নষ্ট করে দেওয়া উচিৎ হবে না।
একজন সত্যিকারের পুরুষ হবে প্রবল আত্মবিশ্বাসী, তার কথাবার্তা ,আচার আচরনণেই তার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে। তার আচরণের মাঝে কোন মিনমিন করা স্বভাব থাকবে না। আর এই জাতীয় পুরুষের প্রতি সবাই সহজেই আকৃষ্ট হয়।
টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ঘাটতি বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
সূত্র:SL/Dorshok24.com/Hea08742