অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়ে হাড় ক্ষয় বলতে কোন শব্দ অবিধানে নেই। আমি মাঝে মাঝেই হাড় ক্ষয়ের বিষয়টি শুনতে পাই। যারা হাড় ক্ষয়ের বিষয়টি বলছেন এবং শুনছেন তাদের প্রতি কথা থাকবে আপনারা হাড় ক্ষয় শব্দটি বলবেননা। আমরা হাড় ক্ষয় শব্দটি শুনতে চাই না। এটি আমাকে ভীত করে তোলে, আমার মাইন্ড সেটাপ হয়ে যায় আমি মনে হয় আর বেশি বাচবোনা, আমারা হাড্ডিগুলো কুড়কুর কেরে ভেঙ্গে যাবে।
তাই আসুন হাড় ক্ষয়, হাড় বেড়ে যাওয়া এ জাতীয় অসভ্য শব্দ চয়ন করা থেকে বিরত থাকুন। বয়স কালে মা বোনদের নয় সকলের ই হাড় নরম হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক তাই বলে ক্ষয় হয়ে যাওয়া বলা যাবে না।
আমাদের উচিৎ হাড় কে যথাযথ ব্যবহার করা অর্থাৎ যত আমি অ্যাক্টিভ থাকব, সচল থাকব, সিঁড়ি দিয়ে উঠব, মাইলকে মাইল হাঁট-চলা করব, নিচে বসে খাওয়া দাওয়া করব, নিচে বসে কাজ কর্ম করব, ভারি জিনিস তুলবো, কোদাল কুরাল দিয়ে কাজ করবো আমাদের পূর্ব পূরুষরা যেভাবে কুয়া থেকে পানি তুলতো, ভারি কাজ কর্ম করতো, যানবাহন ছিলো না হেটে হেটে ১০ থেকে ১৫ মাইল দূর থেকে বাজার করে আসতো। আসুন আমরা এ ধরণের একটিভিটির মাধ্যমে আমাদের হাড় কে সচল রাখি।
জয়েন্ট গুলোকে যত মুভমেন্ট করা যাবে ততই ভালো থাকবে। আমরা বলি জয়েন্ট গুলো যত মোশন হবে ভিতরে ততই লোশন তৈরী হবে। অর্থাৎ জয়েন্টগুলোর ভিতরে একধরনের লিকুইড বা ফ্লুইড তৈরী হয় যেগুলো আমাদের জয়েন্ট গুলোকে মসৃণ রাখে এবং মেশিনের মতো এগুলো কাজ করে। এটা খুব ই গুরুত্বপূর্ণ।
অযথা কেউ কাউকে ভয় দেখাবেননা। যদি কেউ ভয় দেখায় হাড় ক্ষয়ের কথা বলেও থাকে তাও তাদের কথায় কর্ণপাত না করে আপনি নিচে বসে কাজ করবেন, হাটবেন, ভারি কাজ করবেন, জিমে যাবেন কোন কাজ ই বাদ দিবেন না। কেননা আমাদের শরীরে ৬৫০টি মাংসপেশি ৩৩০ টি রক্ত সন্ধি রয়েছে ২০৬ টি হাড় রয়েছে এরা চায় তাদের ব্যবহার। কাজ করতে হাড় নিয়ে কোন ভয় নেই সকল কাজ করতে হবে এতে হাড়ের কোন ক্ষতি হবে না বরং এতে হাড় গুলো আরো শক্তিশালী থাকবে। শুধু ভয় পেতে হবে আমাদের ক্যান্সার হচ্ছে কিনা আমাদের টিভি হচ্ছে কিনা এ জাতীয় কিছু জটিল রোগ নিয়ে।
আমরা ডাক্তাররা আপনাদেরকে এমআরআই করতে দিয়ে থাকি, দয়া করে এমআরআই রিপোর্ট দেখে কেউ ভয় পাবেন না । এমআরআই রিপোর্ট দেখে পাগল হওয়ার কিছু নেই। কেননা এমআরআই এর কথা বলে লাভ নাই, প্রায় ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই এমআরআই ভুল ভাবে উপস্থাপতি হচ্ছে । এমআরআই দেখে কোন সিদ্ধান্তে আসা যাবেনা। মেরুদন্ডের ব্যথা থাকবে, লো ব্যাক পেইন বা মাজা ব্যথা নেই এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই ব্যথা বেদনা কি ভয় না পেয়ে সহ্য করুন, ধৈর্য ধরুন।
তাই ভয় পাবেন না, হাড় ক্ষয় বলতে কিছু নেই। এই শব্দটিকে প্রত্যাখ্যান করুন, এই শব্দটাকে ঘৃণা করুন। এই শব্দটির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন। স্বাস্থ্য সেবা কর্মী এবং সমাজকর্মীদেরকে বলব এই শব্দটি বলে মানুষদেরকে ভেঙ্গে ফেলবেন না বরং সচেতনতা বৃদ্ধি করুন।
পরিশেষে বলব এই বছরের স্লোগান হোক হাড় ক্ষয় বলতে কোনো শব্দ নেই। এই শব্দটি আমরা বলবো না, শুনবো না। আমরা সবাই ভালো থাকি, সুস্থ থাকি, দেশের উপকারে কাজে লাগি। সমাজের জন্য কাজ করি।
অধ্যাপক ডাঃ এম আমজাদ হোসেন
অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন
চীফ কনসালটেন্ট, অর্থোপেডিক সার্জারী বিভাগ
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা ।