চট্টগ্রাম বিভাগ, বাংলাদেশের প্রধান বন্য এলাকা। চট্টগ্রাম জেলার ইতিহাসে প্রাচীনতম ঘটনা থেকে আধুনিক কালের ব্যবসায়িক উন্নয়ন পর্যন্ত বিবৃতি রয়েছে। চট্টগ্রাম যেমন দেশের অন্যতম পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা, ঠিক তেমনি এটি দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত।
চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অত্যন্ত প্রাচীন। ইতিহাসের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে আরাকানী মঘীদের প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে লক্ষ্যমান। গ্রামীণ সংস্কৃতিতেও তার প্রভাব রয়েছে। এক সময়ে এখানের রাজারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হওয়ায় সামাজিক ও ধর্মীয় অবদানে তাদের প্রভাব ছিলো। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য নিখুঁত এবং অদ্ভুত। চট্টগ্রামের মানুষ প্রচুর আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত।
চট্টগ্রামের বর্তমান সংস্কৃতির সূচনা হয় ১৭৯৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর। এর ফলাফল স্বরুপ ভারতীয় উপমহাদেশে সামাজিক ও আর্থিক পরিবর্তন ঘটে। অন্যান্য স্থানের ন্যায় চট্টগ্রামেও একটি নতুন মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে সম্রাট ও সম্রাজ্ঞি হিসেবে শেফালী ঘোষ এবং শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণবের নাম প্রচলিত। মাইজভান্ডারী গান ও কবিয়াল গান চট্টগ্রামের গর্বিত ঐতিহ্যের অংশ। রমেশ শীল একজন বিখ্যাত কবিয়াল শিল্পী, যার সৃষ্টি অবিস্মরণীয়। চট্টগ্রাম থেকে প্রচুর জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস, এল আর বি, রেঁনেসা, নগরবাউল জন্ম নিয়েছে। চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মুসলিম হল, থিয়েটার ইন্সটিটিউট।
চট্টগ্রাম নামের উৎস
চট্টগ্রাম নামের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে, যেমন চৈত্যগ্রাম, চতুঃগ্রাম, চট্টল ইত্যাদি। চৈত্যগ্রাম নামের সূত্র হতে পারে বৌদ্ধ চৈত্য মন্দিরের অস্তিত্ব থেকে, যেখানে প্রাচীনকালে বৌদ্ধ মন্দির ছিলো। চতুঃগ্রাম নামের উৎস হতে পারে সংস্কৃত শব্দ ‘চতুঃ’ অর্থাৎ চার থেকে, যা চারটি গ্রামের সংযোগকে ইঙ্গিত করে। চট্টল নামের সূত্র হতে পারে চট্টল গ্রামের প্রাচীনকালের অস্তিত্ব থেকে, যা হিন্দু ধর্মে পরিচিত ছিল। এই উৎসগুলির সত্যতা নির্ধারিত করা কঠিন। তবে বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে সমান্য প্রসঙ্গতা পাওয়া যায়।
এছাড়াও ইতিহাসে চট্টগ্রামের ৪৮টি নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - চাটিগ্রাম, সুহ্মদেশ, চাতগাঁও, রম্যভূমি, চট্টল, সপ্তগ্রাম, শ্রীচট্টল, চট্টলা, চক্রশালা, চাটিগাঁ, চিতাগঞ্জ, পুস্পপুর ইত্যাদি।
চট্টগ্রামের বিখ্যাত স্থান
চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এর মধ্যে রয়েছে অন্যতম পুরাতন জাহাজ ভাঙ্গা, সীতাকুন্ডুতে চন্দ্রনাথ পাহাড়, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, পতেঙ্গা সী বিচ, আরো অনেক কিছু। এককথায় চট্টগ্রাম হচ্ছে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক এর বিখ্যাত এলাকা। এছাড়া রয়েছে জাদুঘর, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, মোহনা, হালদা নদী, চট্টগ্রাম ইকোপার্ক। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার মোট ১৫টি উপজেলা রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহঃ
চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সমূহ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, ঐতিহাসিক প্রাচীনতা এবং সাংস্কৃতিক মৌলিকতা সমন্বিত আছে। এই স্থানগুলির মধ্যে কিছু অত্যন্ত বিখ্যাত, কিছু নিম্নরুপ:
সীতার পাহাড়, সীতাকুন্ড: এটি চট্টগ্রামের প্রধান পাহাড়, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক মনোরম দৃশ্য। রয়েছে বাড়বকুন্ড, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চেরাগি পাহাড় মোড় (স্মৃতি মিনার), নেভাল এরিয়া, লালদীঘি, বাটালী হিল, ফটিকছড়ি ঝর্ণা. বাঁশখালী ইকোপার্ক, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও মোহামায়া ঝর্ণা। এ ছাড়াও রয়েছে বাইতুল ফালা ও আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ: যা চট্টগ্রামের প্রাচীন মসজিদ এবং ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে ধর্মিয় প্রতীকগুলো রয়েছে।