দিনাজপুরের এক শীতল রাতে, চার বন্ধু—রাহাত, মুনিম, তুহিন, আর নিশাত—একসাথে একটা ট্যুরে গিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল শহরের কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা। তারা দিনের বেলা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পর, রাতে থাকার জন্য একটি পুরনো, ঐতিহ্যবাহী বাংলোতে উঠল। বাংলোটি একটি গভীর বনের মাঝে অবস্থিত, যেখানে মোটা মোটা গাছ আর ঘন ঝোপঝাড়ের কারণে প্রায়ই আলো পড়ত না।
বাংলোতে পৌঁছানোর পর, চার বন্ধু নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করছিল। রাতের খাবার শেষ করে, তারা একসাথে বসে কিছু ভৌতিক গল্প শোনানোর সিদ্ধান্ত নিল। নিশাত প্রথমে শুরু করল। সে গল্প শোনাতে শোনাতে বলল, “শুনেছ, এই বাংলোতে নাকি একসময় একটা ভয়ানক খুন হয়েছিল? কেউ বলে, খুনির আত্মা এখনো এই বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়।”
সবার মুখে এক ধরনের আতঙ্ক ফুটে উঠল। তুহিন হেসে বলল, “এসব ভূতপ্রেতের গল্প শুনে ভয় পেও না। সবই গালগল্প।” কিন্তু নিশাতের কণ্ঠে একটা অদ্ভুত সুর ছিল, যা বাকি সবাইকে কিছুটা হলেও আতঙ্কিত করল।
রাত গভীর হলে সবাই তাদের ঘরে চলে গেল। রাহাত আর মুনিম এক ঘরে, তুহিন আর নিশাত অন্য ঘরে। রাত প্রায় ২টা বাজে, হঠাৎ রাহাত আর মুনিমের ঘরে এক ধরনের অদ্ভুত শব্দ শোনা গেল। মনে হলো কেউ যেন ভারি পদক্ষেপে হাঁটছে। রাহাত উঠে দরজার কাছে গিয়ে দেখল, কেউ নেই। কিন্তু পায়ের শব্দটা যেন আরও জোরালো হয়ে উঠল। মুনিম আতঙ্কিত হয়ে বলল, “এটা নিশ্চয়ই আমাদের মজা দেওয়ার জন্য নিশাতের কাজ।”
দিনাজপুর ট্যুরে গিয়ে রাতে প্যারানরমাল এক্টিভিটির সম্মুখীন
প্যারানরমাল এক্টিভিটি: সংগৃহীত
রাহাত বলল, “তাহলে চল, ওদের ঘরে গিয়ে দেখি।” দুজনে তুহিন আর নিশাতের ঘরে গিয়ে দেখল, তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু পায়ের শব্দটা থামছে না। বরং শব্দটা এখন বাংলোর বাইরে থেকে আসছে। মনে হলো কেউ যেন বনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে।
চার বন্ধু মিলে বাংলোর বাইরে গিয়ে দেখল, একটা অদ্ভুত ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে বনের দিকে চলে যাচ্ছে। নিশাত হঠাৎ বলল, “এটা সেই খুনির আত্মা! আমাদের দ্রুত ফিরে যেতে হবে।”
তুহিন বলল, “এটা কোনো প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা হতে পারে। আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।” কিন্তু নিশাতের চোখে এক ধরনের অদ্ভুত আতঙ্ক ছিল। সে বলল, “আমি এ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে চাই। এখনই।”
রাত কাটানোর উপায় ছিল না, তাই সবাই আবার বাংলোতে ফিরে গেল। কিন্তু আতঙ্ক তাদের মধ্যে ঢুকে গেছে। সারা রাত কেউ ঘুমাতে পারেনি। সকাল হলে তারা দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে এল।
ফিরে আসার পর, রাহাত একটা পুরনো বইয়ে দিনাজপুরের ইতিহাস সম্পর্কে পড়তে গিয়ে দেখল, সত্যিই সেই বাংলোতে একসময় এক খুনির আত্মহত্যা হয়েছিল। কথিত আছে, সেই খুনির আত্মা এখনো রাতের বেলায় বনে ঘুরে বেড়ায়।
চার বন্ধু আবার কখনোও ঐ বাংলোতে ফিরে যায়নি। কিন্তু দিনের আলোতে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও, রাতের আঁধারে ঐ বাংলোতে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটি তাদের স্মৃতিতে চিরদিনের জন্য গেঁথে রইল।
রুপক গল্প লেখক:
ইমরান হোসাইন
গাজীপুর