Search
Close this search box.

শুক্রবার- ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিবাহ দ্বীনের অর্ধেক, এটা কতটা সঠিক?

বিবাহ দ্বীনের অর্ধেক, এটা কতটা সঠিক?

আমাদের সমাজে একটা কথা এভাবে বলা হয় যে, الزواج نصف الدين অর্থাৎ  “বিবাহ দীনের অর্ধেক।”কিন্তু হুবহু এমন শব্দে কোনো কথা কোরআন-সুন্নাহতে পাওয়া যায় না।

তবে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আল্লাহ যাকে নেককার নারী বিবাহ করার তাওফিক দিয়েছে, তাকে তিনি তার অর্ধেক দিন পালনে সাহায্য করেছেন। কাজেই তুমি তোমার বাকি অর্ধেক দিন পালনে আল্লাহকে ভয় করো (১)

এছাড়াও এর সমমর্মে একটি হাদিস আছে। (২)

দুইটা সনদে يزيد الرقاشي ও جابر الجعفي নামে দুর্বল বর্ণনাকারী আছে।
তবে তাদের ‘মুতাবায়াত’ হিসেবে খলিল বিন মুররাহ-নামে আরেক বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর একটি বর্ণনা পাওয়া যায় ।
সুতরাং এই সনদটা যখন আব্দুর রহমান বিন যায়ের সাথে মেলানো হয়, তখন হাদিসটি শক্তিশালী হয়।
তাই তো শায়েখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ হাদিসটিকে ‘হাসান লি গাইরিহী’ বলেছেন। সুতরাং, উক্ত হাদিসটি বলা যাবে এবং দলিল হিসেবে উল্লেখ করা যাবে।(৩) তবে এককভাবে অর্থাৎ উক্ত হাদিসের সমার্থের অন্য হাদিসটা ছাড়া কেবল এই হাদিসটি দুর্বল। যেমনটি হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম মুনাবী ও শায়েখ আলবানী রাহিমাহুমাল্লাহ-ও উল্লেখ করেছেন।(৪)

এছাড়াও এই বিষয় আর অনেক বর্ণনা আছে যেগুলো অনেক যয়িফ, যা দলিল যোগ্য না। (৫)

হাদিসের ব্যাখ্যা কী?
ইমাম গাজ্জালি বলেন, হাদিসের প্রথম অংশ দ্বারা লজ্জাস্থান আর দ্বিতীয় অংশ দ্বারা ‘জবান’ বা জিহবা উদ্দেশ্য।(৬) ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহও একি কথা বলেছেন। সাথে দলিল হিসেবে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) ও দু’পায়ের মাঝখানের অঙ্গ (লজ্জাস্থান)এর ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখবেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”(৭)(৮)

আবু মুহাম্মদ হাসান ক্বহেরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, জাবান ও লজ্জাস্থান দুইটাই যেহেতু দীনের জন্য ক্ষতিকর তাই এখানে দুইটাকে একটা অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে কেউ কেউ লজ্জাস্থানের চেয়ে জাবানের ক্ষতি আপেক্ষিক ভাবে বেশি বলেছেন। কেননা, লজ্জা স্থানের গুনাহ করার জন্য অন্য একজনকে রাজি করানোর দরকার হয়। অথচ জবানের ক্ষতির জন্য এসব কোনো কিছুই লাগে না। (৯)

নোটঃ সুতরাং, ‘বিবাহ দীনের অর্ধেক’ এমন কথা না বলাই ভাল। বললে যে আহমরি ক্ষতি হবে-এমন না। তবে এটা ইসলামের নির্বাচিত কোনো শব্দ না। কেননা, ইসলামের অনেক বিষয়কে দীনের অর্ধেক বলা হয়েছে অন্য একটা বস্তুর সাথে তুলনা করে। সেগুলোর ক্ষেত্রে আমরা যে ব্যাখ্যা করে থাকি এক্ষেত্রেও সেই ব্যাখ্যা করা উচিত। নতুবা অন্যান্য হাদিসের ব্যাখ্যা ও নিরসনে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

তথ্যসূত্রঃ

১। মু’জামুল আওসাত, হাদিস নংঃ ৯৭২, শুয়া’বুল ইমান, হাদিস নংঃ ৫১০১, মুস্তাদরকে হাকিমঃ ২/১৬১। ২। শুয়া’বুল ইমান, হাদিস নংঃ ৫১০০ ৩। সহিহ তারগীবঃ ১৯১৬৷ সিলসিলাতুস সহিহাঃ ৬২৫. ৪। ফাতহুল বারিঃ ১১/১২, দয়ীফুল জামিঃ ৫৫৯৯, ফয়জুল কদীরঃ ৬/১৩৭. ৫।ইলালুল মুতানাহিয়াঃ ২/৬১২, মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ৪/২৫৫, কামিল ফিদ দুয়াফাঃ ৬/৪৯৪, কাফি শাফিঃ ২০১. ৬। ইহইয়াউলুমিদ্দীনঃ ২/২২, নাজমুল ওয়াহহাজঃ৭/৮। ৭। সুনানে তিরমিজি, হাদিস নংঃ ২৪০৯। ৮। তাফসিরে কুরতুবীঃ ৯/৩২৭। ৯। ফাতহুল করিবুল মুজীবঃ ৮/৫৯২-৫৯৩.

ইসলামিক ডেস্ক | দর্শক২৪.কম

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়