
বাংলাদেশের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দূত ক্রিস্টিন টিলি ঢাকায় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। দি ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে জলবায়ু অর্থায়ন, ন্যায্যতা এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার বিষয়গুলো উঠে আসে।
বৈঠকে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের স্পষ্ট সংজ্ঞা থাকা জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, অনেক সময় বিভিন্ন উন্নয়ন সহায়তাকে জলবায়ু অর্থায়নের আওতায় আনা হয়, যা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, যারা অতীতে অধিক কার্বন নিঃসরণ করেছে, তাদের ওপর অধিক দায়িত্ব থাকা উচিত, তবে বর্তমান সময়ে কিছু উন্নয়নশীল দেশও বড় দূষণকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সুতরাং, তাদেরও এ ব্যাপারে অবদান রাখতে হবে। তবে জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি বাড়বে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
বাংলাদেশের জলবায়ু নীতির দৃষ্টিকোণ তুলে ধরে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অধিক সংখ্যক দেশকে সম্পৃক্ত করা দরকার। তবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা ভিন্ন। কেউ ভোগবাদী জীবনযাত্রা রক্ষায় কাজ করছে, আবার কেউ দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সংগ্রাম করছে। তিনি আরও বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার চ্যালেঞ্জ অনেক দেশের জন্য কঠিন হতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন, প্যারিস চুক্তি কাঠামোগতভাবে ইতিবাচক হলেও বাস্তবে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। প্রতি পাঁচ বছর পর উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণের ব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি ও প্লাস্টিক দূষণের বিষয়ে আলোচনায় বিভিন্ন বাধার কথাও তিনি তুলে ধরেন।
অস্ট্রেলিয়ার ২০২৬ সালে COP31 আয়োজনের বিষয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, কঠোর ভিসানীতি দক্ষিণ গোলার্ধের অনেক দেশের জন্য অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, পূর্ববর্তী কিছু COP সম্মেলনে এ ধরনের সমস্যা দেখা গেছে।
ক্রিস্টিন টিলি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়া সহযোগিতা বাড়াতে চায় এবং অভিযোজন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে আন্তর্জাতিক আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, প্রকল্প ভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়নের পরিবর্তে কাঠামোগত পরিবর্তনে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
বৈঠকে দুই পক্ষই দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। তারা বলেন, জাতিসংঘের কাঠামো বজায় রাখা জরুরি হলেও বিকল্প উপায় নিয়েও ভাবতে হবে।
এর আগে উপদেষ্টা ঢাকায় “বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া: জলবায়ু নীতি ও সবুজ জ্বালানি রূপান্তর” শীর্ষক সংলাপে অংশ নেন।