মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার এই নির্বাচনী লড়াইতে শুধু সাধারণ জনগণই নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী তারকাদেরও ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। হলিউড তারকা থেকে শুরু করে ক্রীড়াঙ্গনের দিকপাল, এমনকি শীর্ষস্থানীয় ধনী উদ্যোক্তারাও নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছেন, যা নির্বাচনের প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কমলা হ্যারিস, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ান-আমেরিকান নারী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন, তার সমর্থনে বহু প্রগতিশীল ও মানবাধিকারকামী তারকা প্রকাশ্যে এগিয়ে এসেছেন। বিশ্বখ্যাত সংগীতশিল্পী বিয়ন্সে, অভিনেত্রী অপরা উইনফ্রে এবং প্রখ্যাত পপ আইকন টেইলর সুইফটসহ অনেকেই কমলার পক্ষে জোরালোভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের মতে, কমলা হ্যারিস নারী ক্ষমতায়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং জাতিগত বৈষম্য নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে কমলা ও ডেমোক্র্যাটদের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
কমলার পক্ষে দাঁড়ানো তারকারা যুক্তি দিচ্ছেন যে, বর্তমান সময়ের সামাজিক আন্দোলন, বিশেষ করে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন ও অভিবাসন সংস্কার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি খুবই প্রাসঙ্গিক। এছাড়াও কমলার সমর্থনে সাম্প্রতিক সময়ে আরও যোগ দিয়েছেন অভিনেতা ডোয়াইন "দ্য রক" জনসন, যিনি সাধারণত রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। জনসন তার সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, "নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সহানুভূতি ও সম্মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমি সেটিই দেখতে চাই।"
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন জানানো তারকারাও কম সংখ্যক নন। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা মূলত ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে। র্যাপার কানিয়ে ওয়েস্ট এবং অভিনেতা ও পৃষ্ঠপোষক স্কট বেইলোর মতো ব্যক্তিত্বরা ট্রাম্পের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তারা বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের কৌশল ও নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক। এছাড়াও এলন মাস্কের মতো ধনী উদ্যোক্তারা ট্রাম্পের কিছু নীতিমালাকে সমর্থন করেছেন, যদিও তাদের অবস্থান কিছুটা মিশ্র।
ট্রাম্পের পক্ষে থাকা সমর্থকরা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে তার কঠোর অবস্থানকেই বড় করে দেখান। অনেক রক্ষণশীল খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে মিউজিক শিল্পের কিছু র্যাপার এবং অভিনেতা, ট্রাম্পের ব্যবসাবান্ধব পদক্ষেপের প্রতি প্রশংসাসূচক বক্তব্য দিয়েছেন।
মার্কিন নির্বাচনকে ঘিরে তারকাদের সমর্থন শুধুই আলোচনার বিষয় নয়, এটি প্রভাব ফেলার মতো একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়। নির্বাচনী প্রচারে তারকারা অংশ নিলে তা বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে সাড়া জাগায়। তবে এ নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। অনেকের মতে, তারকাদের রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ করলে তা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে, আবার অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করেন, তারকাদের মতামত সচেতনতার প্রসার ঘটাতে সহায়ক।
তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই নির্বাচনে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তারকাদের সমর্থন নতুন মাত্রা যোগ করছে এবং বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক আলোচনায় তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি করছে। কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তা নির্ধারণে শুধু রাজনৈতিক মতাদর্শ নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাবও বড় ভূমিকা পালন করবে।