সিরিয়ায় দীর্ঘ প্রতিরোধের পর অবশেষে বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন হয়েছে। এই বিজয় এসেছে ইসলামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে, যার প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। সিরিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাসে এই ঘটনা নতুন যুগের সূচনা করেছে।
সিরিয়ার বর্তমান সংকটের শুরু ২০১১ সালে, যখন বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ শুরু হয়। শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ দমন করতে আসাদ সরকার সহিংস পথ বেছে নেয়। এর ফলে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, যা সিরিয়ার জনগণকে দীর্ঘদিন অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রেখেছিল।
আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি সিরিয়ার সুপরিচিত বিদ্রোহী নেতা। ১৯৮২ সালে সৌদি আরবে জন্ম নেওয়া জোলানি পরে সিরিয়ায় ফিরে আসেন। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের সময় তিনি আল-কায়েদায় যোগ দেন এবং সেখান থেকেই তাঁর সামরিক দক্ষতার বিকাশ ঘটে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সিরিয়ায় আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এই সংগঠন বিবর্তিত হয়ে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে আত্মপ্রকাশ করে।
৮ ডিসেম্বর এইচটিএস এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় জানায়, বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং সিরিয়া এখন মুক্ত। এর মাধ্যমে এক দমনমূলক শাসনের অবসান হলো। এইচটিএসের প্রধান লক্ষ্য ছিল সিরিয়াকে মুক্ত করা এবং ইরানপন্থী বাহিনীকে উৎখাত করা।
জোলানির নেতৃত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাঁর কৌশলগত পরিবর্তন। তিনি আন্তর্জাতিক জিহাদের পরিবর্তে সিরিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মনোযোগী হন। এর মাধ্যমে তাঁর গোষ্ঠীটি বহুজাতিক থেকে একটি জাতীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদের পতনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে এইচটিএস। জোলানির কৌশলী নেতৃত্ব এবং এইচটিএসের যুদ্ধ পরিকল্পনা সিরিয়ার জনগণের জন্য নতুন আশার আলো এনেছে।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, যেমন আল-জাজিরা, জোলানির অতীত ও বর্তমান নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তবে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ এখনো অনেক। নতুন শাসনব্যবস্থা কীভাবে গড়ে উঠবে এবং কীভাবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে, তা সময়ই বলে দেবে।