মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সামরিক অগ্রযাত্রার ফলে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে নতুন একটি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর একটি রাখাইন বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এই অঞ্চলে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন গ্যাস রিজার্ভ এবং অর্থনৈতিক জোন থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্য, রোহিঙ্গা সমস্যা, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান। নতুন রাষ্ট্র গঠিত হলে এটি বাংলাদেশের জন্য ভৌগলিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে।
প্রায় দেড় দশক আগে গঠিত আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে রাখাইনের ৮০ শতাংশ এলাকা দখলে নিয়েছে। সর্বশেষ মংডু দখলের মধ্য দিয়ে তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটির পতন ঘটিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, খুব শীঘ্রই তারা স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারে। চীন ও ভারত ইতোমধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে, যা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিকে নতুন মোড় দিতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ: ১. সীমান্ত নিরাপত্তা: বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটারের সীমান্ত এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় অবহেলা করলে এটি দেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ২. রোহিঙ্গা সংকট: রাখাইন রাজ্যে নতুন রাষ্ট্র গঠিত হলে রোহিঙ্গা সমস্যা আরো জটিল হবে। সীমান্তের ওপারে থাকা ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে ঢল নামার আশঙ্কা রয়েছে। ৩. কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ: রাখাইন রাজ্যের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান চীন ও ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে, নতুন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে সম্পর্ক তৈরি করবে তা কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সরকার আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের সম্ভাবনা বিবেচনা করছে। সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
রাখাইন রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ চীন ও ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন ইতোমধ্যে সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর এবং পাইপলাইন নির্মাণ করেছে। অন্যদিকে, ভারত কালাদান প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বাইপাস করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রও এই অঞ্চলে তার কৌশলগত উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
সমাধানের পথ: সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার: সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য: কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিতে হবে।
রাখাইন রাজ্যে নতুন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। বাংলাদেশকে এই সংকট মোকাবিলায় কৌশলগতভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে। নতুন রাষ্ট্র আরাকানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই বয়ে আনবে।