শনিবার- ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঋণের বোঝায় ডুবছে দক্ষিণ বিশ্ব

srilankar-rin-sankat-ar-krutshota
ছবি সংগৃহীত

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল।  বর্তমান দেশটি ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সময় পার করছে। সীমাহীন ও উচ্চ সুদের ঋণ, দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও বাইরের ধাক্কা—এই তিনের বিষাক্ত মিশ্রণেই সেটা ঘটেছিল অর্থনীতির বিপর্যয়।

আরাগালায়া’ নামে এক গণআন্দোলনের ব্যানারে শ্রীলঙ্কায় দেশজুড়ে নাগরিকরা রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলনের মূল দাবি ছিল—জবাবদিহি নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক দুর্নীতির অবসান ঘটানো। আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ‘আরাগালায়া’ আন্দোলনের চাপে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ করেন  এর পর রনিল বিক্রমাসিংহে আবারও ক্ষমতায় আসেন।

২০২৩ সালে ৩০০ কোটি ডলারের একটি ঋণ চুক্তি করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে। একটি নতুন নির্বাচনের আয়োজনের বদলে এই চুক্তি করা হয়। একই বছরের শেষদিকে বেইল আউট প্যাকেজের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে চীন, ভারত ও জাপানসহ বিভিন্ন ঋণদাতা দেশের সঙ্গে দেনা পুনর্গঠনের চুক্তিতে যেতে হয় শ্রীলঙ্কাকে।

২০২৪ সালের নির্বাচনে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার জনগণ এক প্রগতিশীল সরকারকে ক্ষমতায় আনলেও, সেই সরকার শুরু থেকেই আইএমএফের কঠোর শর্ত ও পূর্বতন সরকারের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার ফাঁদে আটকে পড়েছে।

২০২৩ সালে দিশানায়েক সরকার ক্ষমতায় এসেই  আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সঙ্গে ৩০০ কোটি ডলারের একটি বেইল আউট কর্মসূচিতে চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর দ্বিতীয় কিস্তি পেতে চীন, ভারত ও জাপানসহ বিভিন্ন ঋণদাতা দেশের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন করতে হয়।

নবউদারনৈতিক অর্থনীতিবিদরা শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মসূচিকে ‘স্থিতিশীলতার পথে অগ্রগতি’ হিসেবে তুলে ধরলেও, মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তথাকথিত “অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার” বাস্তব অর্থে জনগণের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এক রকম শাস্তি। সরকারি মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলো এখন করপোরেট স্বার্থে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, জনগণের নিয়ন্ত্রণ কমে আসছে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো, সরকারের ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অবকাঠামোসহ জাতীয় উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।

আজ ঋণদাতাদের স্বার্থকেই জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হচ্ছে। ফলে জনগণের মৌলিক অধিকার, সামাজিক সুরক্ষা এবং কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

২০২৫ সালের মধ্যে বাজেটে ২.৩% উদ্বৃত্ত অর্জনের লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কাকে কৃচ্ছ্রসাধনের ভয়াবহ পথ নিতে হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।এই লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে সরকার বাধ্য হয়েছে কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটতে। কিন্তু এই প্রশ্ন এখন দিন দিন জোরালো হচ্ছে—এই ‘উদ্বৃত্ত’ কার জন্য? এটা কি দেশের গরিব জনগণের জন্য, নাকি আন্তর্জাতিক ঋণদাতা ও করপোরেট বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে? যদি সেই অর্থ আসে দরিদ্র মানুষের পকেট থেকেই, যদি তা আসে সাবসিডি কমিয়ে, বেতন-ভাতা হ্রাস করে, জনসেবায় কাটছাঁট করে—তবে এই অর্থনৈতিক নীতির নৈতিক বৈধতা কোথায়?

 

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়