ডিসেম্বর মাস বাঙালি জাতির জীবনে বিশেষ অর্থবহ। ১৯৭১ সালের এই মাসেই অর্জিত হয়েছিল বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছিল সেই মহান বিজয়। এ মাসই বাংলাদেশকে পরিচিত করেছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাস বাঙালির রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়। এই মাসেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি হাজার বছরের শোষণ, বৈষম্য ও অপমানের অবসান ঘটায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ পেয়েছিল একটি গৌরবময় পরিচয়।
প্রতি বছরের মতো এবারও বিজয়ের মাস উদ্যাপন করতে দেশজুড়ে চলছে নানা আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বিজয়ের স্মৃতিকে উজ্জীবিত করতে আয়োজিত হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।
- জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ও চিত্র প্রদর্শনী।
- মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা নিয়ে আলোচনা সভা।
ডিসেম্বর মাসে দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল বিজয়ের চেতনায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিএনপির ডিসেম্বর মাসের কর্মসূচি:
১. মহান বিজয় দিবস উদযাপন: ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল এবং জাতির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন।
২. বিভাগীয় সমাবেশ: বিজয়ের চেতনায় দেশব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশ আয়োজন করে জনগণের মধ্যে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো। মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ ও বর্তমান রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা।
৩. গণসংযোগ কর্মসূচি: দলীয় নেতা-কর্মীরা গণসংযোগের মাধ্যমে জনগণের কাছে দলের বর্তমান অবস্থান এবং দাবি তুলে ধরছে। লিফলেট বিতরণ এবং গণমাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা।
৪. মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি: বিএনপি অভিযোগ করছে, দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। এজন্য দলটি ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ এবং মিছিলের আয়োজন করেছে।
৫. মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনঃস্থাপনা: মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠা এবং তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দাবিতে বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রক্ষার উদ্যোগে আলোচনা সভা এবং গবেষণামূলক প্রকাশনা।
৬. ত্রাণ ও শীতবস্ত্র বিতরণ: শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। দলটি এই উদ্যোগকে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেখছে।
৭. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: দলীয় উদ্যোগে বিজয়ের মাস উদযাপনে মুক্তিযুদ্ধের গানে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এতে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো হচ্ছে।
বিএনপির বার্তা: বিজয়ের মাসে বিএনপি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হতে। দলটি বলছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকৃত বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব, যখন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, এবং আইনের শাসন থাকবে।
জামায়াতের ডিসেম্বর মাসের কর্মসূচি:
মহান বিজয় দিবস উদযাপন: ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
গণসংযোগ কর্মসূচি: দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনগণের কাছে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে বিজয়ের চেতনায় তাদের ভূমিকা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
বিভাগীয় সমাবেশ: ডিসেম্বর মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও আলোচনা সভা আয়োজন করেছে দলটি। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গুরুত্ব এবং দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ: জামায়াত মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়েছে।
সামাজিক কার্যক্রম: মাসব্যাপী দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ এবং শীতবস্ত্র প্রদান কর্মসূচি চালু রয়েছে।
বিজয়ের চেতনায় জামায়াতের বার্তা: জামায়াতে ইসলামী মনে করে, দেশের প্রকৃত উন্নয়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়নে জনগণের ঐক্য অপরিহার্য। দলটি বিজয়ের মাসে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশপ্রেম, ন্যায়বিচার এবং ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে দেশ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ: বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও জনসভার আয়োজন করেছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি: বিজয়ের মাস উদ্যাপনে বিশেষ প্রচারাভিযান শুরু করেছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন: তরুণদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
ডিসেম্বর মাস মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিজ্ঞার মাস। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ এবং তাদের অর্জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ মাসে জাতীয় পুনর্জাগরণে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হবে।