
বাংলাদেশের নদীগুলো পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়ে আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, নদীগুলোর স্থায়ী সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য প্রকল্পভিত্তিক সমাধানের পরিবর্তে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পানি ভবনে আয়োজিত “নদী পুনরুদ্ধার: বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা” শীর্ষক সেমিনারে তিনি বলেন, “নদীর একটি অংশ নয়, বরং পুরো নদী সংযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
তিনি বুড়িগঙ্গার দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে ট্যানারির ক্রোমিয়াম দূষণকে উল্লেখ করেন এবং দ্রুত বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের মতো সংস্থাগুলোর সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা উচিত।”
পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, ১৯৯৯ সালের পানি নীতি ও চলমান ডেল্টা পরিকল্পনার সংশোধন ভবিষ্যতে নদী সংরক্ষণের কাঠামো হিসেবে কাজ করবে। ইতোমধ্যে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) উপত্যকার নদীগুলোর পুনরুদ্ধারের রূপরেখা তৈরি করেছে।
তিনি জানান, শিল্প-কারখানার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সরকার প্রস্তুত রয়েছে। নদী দখলদারদের তালিকাও সরকারের কাছে রয়েছে, যা কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে।
নদীর প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে প্রচলিত ড্রেজার ব্যবহারের অযোগ্যতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নদীর তলদেশ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সরানোর জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন।” তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কর্মপরিষদ গঠনের আহ্বান জানান।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতি দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে যথাযথ সম্পদ ও পরিকল্পনা নিয়ে সুরমার মতো নদীগুলোর পুনরুদ্ধার সম্ভব।” তিনি প্রকল্পভিত্তিক উদ্যোগের পরিবর্তে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানায় ধারাবাহিক নদী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি এডিবির সহায়তায় অন্তত একটি নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে একটি টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনিযুক্ত প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, বাংলাদেশে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি হো ইউন জিয়ং এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান।
এছাড়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, এডিবির পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ ইয়াওঝো ঝোউসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা নদী পুনরুদ্ধার বিষয়ে মত বিনিময় করেন।