দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০তম দিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের স্মরণ করেন এবং জনগণকে আসন্ন নির্বাচন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করেন।
ড. ইউনূস জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। তার ভাষায়, "নির্বাচনের জন্য ট্রেন যাত্রা শুরু হয়েছে। এটি থামানো হবে না। তবে গন্তব্যে পৌঁছাতে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, সরকারের মূল লক্ষ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। "আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা করছি। তাদের মতামত নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি," তিনি যোগ করেন।
নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজ কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি। কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরির কাজও চলছে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, "নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। আমরা এমন একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যা ভবিষ্যতে দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে মজবুত করবে।"
তিনি জাতির উদ্দেশে বলেন, "সংস্কার হলো দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের চাবিকাঠি। আপনারা আমাদের যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে আমরা সংবিধান, আইন, এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার চালিয়ে যাব।"
এ সময় তিনি জনগণকে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মতামত জানাতে উৎসাহিত করেন। "আপনারা দেশের মালিক। আপনাদের মতামতই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ," তিনি বলেন।
বিগত সরকারের শাসনকালে সংঘটিত গুম ও খুনের ঘটনায় তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমাদের গুম বিষয়ক কমিশন ইতোমধ্যে ১,৬০০টি ঘটনার তথ্য পেয়েছে। আমরা ধারণা করছি এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।"
তিনি আশ্বস্ত করেন, "এই অপরাধে জড়িতরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের রেহাই দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হব।"
ড. ইউনূস জানান, সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, "আমরা এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, যা ভবিষ্যতে দেশকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করবে। এজন্য আপনাদের ধৈর্য এবং সহযোগিতা চাই।