
বাংলাদেশের শিল্পখাতকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে স্থানান্তরের জন্য ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, টেকসই জ্বালানির অভাবের কারণে শিল্পখাত দীর্ঘমেয়াদে সংকটে পড়তে পারে, যা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে নেদারল্যান্ডস দূতাবাস আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম (SAF) ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি গ্রিন ফ্যাক্টরি থাকলেও শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেই শিল্পখাত টেকসই হবে না। টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার, দায়িত্বশীল পানি ব্যবস্থাপনা এবং রাসায়নিক বর্জ্যের সুষ্ঠু নিষ্পত্তি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি পানিসমৃদ্ধ দেশ হলেও শিল্পখাতে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার ভবিষ্যতে সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তাই সরকার শিল্পখাতে পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে চার্জ আরোপের পরিকল্পনা করছে এবং পুনঃব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রণোদনার কথা ভাবছে।
গত কয়েক বছরে গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে শিল্পকারখানাগুলোকে উৎপাদন সংকটে পড়তে হয়েছে। এ বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের শিল্পখাতকে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে নিয়ে যেতে হবে। এই খাতে বিনিয়োগের জন্য সরকার নানা ধরনের প্রণোদনা দেবে।
পরিবেশ রক্ষার জন্য রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার জার্মানির সহযোগিতায় ‘কেমিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুল’ প্রণয়নের কাজ করছে, যা শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে পরিবেশ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
শ্রমিক কল্যাণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সস্তা শ্রম শব্দটি আমাদের শিল্পখাত থেকে দূর করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে, যেখানে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের প্রয়োজন নৈতিকভাবে সোর্সিং করা, যাতে শ্রমিকরা উপযুক্ত মজুরি পান এবং শিল্পকারখানাগুলো টেকসইভাবে পরিচালিত হয়।
তিনি বলেন, উন্নত প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “নতুন টেকসই মানদণ্ড গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
উক্ত অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কারস্টেনস এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (BIDA) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন উপস্থিত ছিলেন।