ভালো নির্বাচন জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সমস্যার সমাধান নিয়ে আসতে পারে বলে মত দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ। তাঁর মতে, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন। স্থানীয় নির্বাচনে গুণগত মান নিশ্চিত করা গেলে তা ধীরে ধীরে জাতীয় নির্বাচনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ড. তোফায়েল আহমেদ। এই সভা আয়োজন করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ও উপজেলা প্রশাসন। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে নির্বাচন নয়।
ড. তোফায়েল উল্লেখ করেন, ভালো নির্বাচন আয়োজনের জন্য শুধু প্রশাসন নয়, ভোটারদেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। ভোটারদের উচিত যোগ্য প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করা। তিনি আরও বলেন, ভালো প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সমস্যায় পড়েন মূলত নির্বাচনী খরচ এবং পেশিশক্তির প্রভাবের কারণে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার জন্য সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন যেমন ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ, সেগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। উপজেলা নির্বাচনে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রতিনিধি না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের জনগণ সঠিক প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছে না। জেলা পরিষদ নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “জেলা পরিষদ এখন কার্যত পুনর্বাসন কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি সংস্কার না করলে কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্ভব নয়।”
ড. তোফায়েল বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকা উচিত। এটি সাধারণ জনগণের ইচ্ছার বিপরীতে যায়।” তিনি জানান, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন এ বিষয়ে কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইউএনও’রা একদিকে জেলা প্রশাসকের কাছে দায়বদ্ধ, আবার অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত। এই দ্বৈত ভূমিকা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।”
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, “ভালো নির্বাচন আয়োজন করতে হলে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। ভোটারদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। একই সঙ্গে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করতে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।” তিনি আরও যোগ করেন যে, শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রার্থীদের জন্য একটি বাধ্যবাধকতা নয়, তবে শিক্ষিত ও সৎ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, এবং সিংগাইর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান সোহাগ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা, পৌরসভার সাবেক মেয়র ও চেয়ারম্যানরাও আলোচনায় অংশ নেন।
ভালো নির্বাচন জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এটি নিশ্চিত করতে হলে ভোটারদের পাশাপাশি প্রার্থীদের সচেতনতা এবং প্রশাসনিক সংস্কার অপরিহার্য। ড. তোফায়েল আহমেদের মতামত ও প্রস্তাবনাগুলো এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।