ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন বুধবার রাতে ব্যাপক ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। স্থানীয় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের ফলে ভবনটির বড় একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যায় এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। পরবর্তীতে এক্সকাভেটর, ক্রেন ও বুলডোজারের মাধ্যমে বাড়িটির অধিকাংশ অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নতুন করে আবারও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে।
টানা কয়েক দশক ধরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা তিনতলাবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু ভবনের অধিকাংশ অংশ এখন কেবল ধ্বংসস্তূপ। বাড়িটির একাংশ এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকলেও আশেপাশের স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার প্রেক্ষিতে বুধবার রাতে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। এরই মধ্যে হঠাৎ নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ থেকে শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের ঘোষণা আসার পর উত্তেজনা চরমে ওঠে। বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। রাত আটটার পর হাজার হাজার মানুষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সমবেত হয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা গেট ভেঙে বঙ্গবন্ধু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে এবং ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে। ভাঙচুরকারীরা জানালার গ্রিল, কাঠের ফ্রেম ও ফটকের অংশবিশেষ ভেঙে নিয়ে যায়।
রাত ১১টার দিকে একটি ক্রেন ও এক্সকাভেটর ঘটনাস্থলে আসে এবং বাড়ির একাংশ ভাঙার কাজ শুরু হয়। রাত ১টার দিকে আরও দুটি বুলডোজার আনা হয়, যা ধ্বংসযজ্ঞকে আরও ত্বরান্বিত করে।
বুধবার রাত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে সীমিত সংখ্যায় উপস্থিত ছিল। মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলেও তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ মাইকের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়, "যাদের ভবন ভাঙার ইচ্ছা আছে, তারা সামনে এসে অংশ নিন।" পাশাপাশি, একটি বিশাল প্রজেক্টরে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হতে দেখা যায়।
এই আন্দোলনের ঢেউ শুধু ধানমন্ডি ৩২ নম্বরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ঢাকার বাইরে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ভোলা ও পিরোজপুরেও শেখ হাসিনার আত্মীয়দের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর নামফলক অপসারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুরের কাজ শুরু হয়। ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির অংশ থেকে ইস্পাত ও রড সংগ্রহ করতে দেখা যায় স্থানীয়দের।