
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে “সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ” একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের আয়োজন করে, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল “ফ্যাসিবাদের বিচার, দায় ও মীমাংসা”। এই সেমিনারে বিশিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং শিক্ষাবিদরা তাদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন।
বক্তারা উল্লেখ করেন, বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হলে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন বলেন, “ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানবাধিকার রক্ষা করা। সঠিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না হলে পুনরায় এমন নিপীড়ন দেখা দিতে পারে।” তিনি জাতিসংঘের UNHCR-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টকে এই বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মামলা, গুম ও হত্যা তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক মো: সালাহউদ্দিন খান বলেন, “গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যাপকহারে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মাত্র ৩ জন গুমকৃত ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছেন, বাকিদের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।” তিনি আরও বলেন, “সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৬,০০০-এর বেশি এফআইআর করা হয়েছে এবং ২,২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।”
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া আরভাইনের পিএইচডি ফেলো খন্দকার রাকিব বলেন, “ন্যায়বিচার এড়িয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা করা হলে তা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের সঠিক প্রতিকার না হলে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই প্রতিটি জেলায় জুলাই গণহত্যার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত।”
এবি পার্টির জুলাই অভ্যুত্থান বাস্তবায়ন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট উদয় তাসমীর বলেন, “৭২-৭৫ এর সময়কার বাকশালীয় শাসন ব্যবস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত না করে বরং পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু রাজনৈতিক পদক্ষেপ, যেমন ‘ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর’ ভবন ভেঙে ফেলা, একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে।”
মানবাধিকার সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নিপীড়নের চিত্র নয়, বরং এটি একটি গণহত্যার রূপ নিয়েছে। হাজার হাজার পরিবার আজ ন্যায়বিচারের আশায় কাঁদছে। আমরা চাই ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান এবং সকল ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার।”
এই সেমিনারে বক্তারা গণতন্ত্র রক্ষা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের বিচার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা মনে করেন, একটি সুসংগঠিত ও ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন মো: সাইমুম রেজা তালুকদার, প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বাংলাদেশ।