হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) নামে একজন সাহাবি ছিলেন। তিনি ছিলেন মদিনা মনোয়ারার একটি মসজিদের ইমাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ইয়েমেনের কাজি হিসেবে নিয়োগ করেন।
মুআজ (রা.) যেদিন কর্মস্থলে রওনা দেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)–ও তাঁকে পায়ে হেঁটে বেশ কিছু পথ এগিয়ে দিতে আসেন। মুআজ (রা.) অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে বললেন, ‘আপনি সওয়ারিতে আরোহণ করুন।’
নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি তোমার প্রতি নয়, তোমার জ্ঞানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছি।’
নবীজি (সা.) যখন মুআজ (রা.)-কে বিদায় জানাচ্ছিলেন, তাঁকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, ‘হে মুআজ, সম্ভবত আমার সঙ্গে তোমার আর সাক্ষাৎ হবে না।’ বাস্তবে ঘটেছিল তা–ই। হজরত মুআজ (রা.) ইয়েমেন থেকে ফিরে আসেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর।
মুআজ (রা.)–কে বিদায় জানাতে গিয়ে সর দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বক্তব্য দেন।
হজরত মুআজ (রা.) বিদায়কালে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি এমন একটি পথ বাতলে দিন, যাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। জাহান্নাম থেকে নাজাত পেতে পারি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘মুআজ, তুমি আমাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন করেছ। আল্লাহ অবশ্য এটি যার জন্য সহজ করে দেন, তার জন্য তা সহজ হয়ে যায়। তুমি কখনো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, রমজানের রোজা রাখবে, জাকাত দেবে আর হজ করবে।’
এর পর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে থেকেই প্রশ্ন করেন, ‘আমি কি তোমাকে পুণ্যের দরজাগুলোর সংবাদ দেব না?’ বলেই তিনি বললেন, ‘রোজা ঢালের মতো (তা প্রতিটি বিপদ এবং শাস্তিকে প্রতিরোধ করে)। পানি যেমন আগুনকে, সদাকা ঠিক সেভাবে গুনাহ্র বিনাশ ঘটায়। তুমি রাতে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়বে।’
এই বলে রাসুল (সা.) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘বলো, তোমরা যদি মৃত্যুর বা নিহত হওয়ার ভয়ে পালাও, তাহলে তোমাদের লাভ নেই আর তোমরা পালাতে পারলেও তোমাদের জীবন ভোগ করতে দেওয়া হবে। বলো, আল্লাহ যদি তোমাদের অমঙ্গল চান, কে তোমাদের রক্ষা করবে আর যদি তোমাদের অনুগ্রহ করতে ইচ্ছা করেন, কে তোমাদের বঞ্চিত করবে? ওরা আল্লাহ ছাড়া নিজেদের জন্য কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ১৬-১৭)
তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে নামাজ, আর তার শৃঙ্গ হচ্ছে জিহাদ।’
রাসুল (সা.) আবার প্রশ্ন করলেন, ‘আমি কি তোমাকে এসব জিনিসের সারকথা বলে দেব না?’ তিনি হাত দিয়ে নিজের জিব স্পর্শ করে বললেন, ‘একে নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এর কারণেই মানুষকে উল্টোমুখী করে জাহান্নামে ছুড়ে ফেলা হবে।
এর পর রাসুলুল্লাহ (সা.) জাকাত, প্রশাসন-ব্যবস্থা এবং ফরজের কিছু কিছু ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, ‘বিত্তশালীদের কাছ থেকে জাকাত নেওয়া হবে, আর বিত্তহীনদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হবে। দেখো, জাকাত–দাতাদের কাছ থেকে তাদের ভালো মালগুলো জোর করে নিয়ে আসবে না। মালুমের আর্তচিৎকার থেকে সব সময় বেঁচে থাকবে। কেননা, আল্লাহ এবং তাদের (আর্তচিৎকারের) মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।’ (তিরমিজি)
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর এসব বক্তব্যে জান্নাতে দাখিল হওয়ার এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত পাওয়ার উপায় স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। তিনি জুলুম থেকে দূরে থাকার জন্য বিশেষভাবে সাবধান করে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এটাই নাজাতের পথ।