জনপ্রশাসন একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তবে বাংলাদেশে এটি দিন দিন দলীয়করণ, অদক্ষতা, এবং সেবার মানহীনতায় ভুগছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে দক্ষ, জবাবদিহিমূলক এবং জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনপ্রশাসন কমিশনকে যেসব বিষয় অগ্রাধিকার দিতে হবে:
- দলীয়করণমুক্ত প্রশাসন: প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা।
- পাবলিক সার্ভিস কমিশন সংস্কার: নিয়োগে স্বচ্ছতা ও মেধার মূল্যায়ন।
- পদোন্নতির মানদণ্ড: জ্যেষ্ঠতা, যোগ্যতা এবং সততাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ।
- সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষা: বেআইনি আদেশ অমান্য করার ক্ষেত্রে চাকরির নিশ্চয়তা।
বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে দলীয় প্রভাব একটি সাধারণ সমস্যা। সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "প্রতিটি সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব জনগণের সেবা করা।" কিন্তু বাস্তবে, প্রশাসনের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক দলগুলোর তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করছে। ফলে জনগণের প্রতি তাদের জবাবদিহি কমে যাচ্ছে। প্রশাসনিক ক্যাডারদের মধ্যে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য, পদোন্নতির অসামঞ্জস্য এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। একাধিক ক্যাডারের সমান সুযোগ নিশ্চিত না হওয়া সেবার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিম্নরূপ হতে পারে:
প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত করার লক্ষ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বেআইনি আদেশ অমান্য করার ক্ষেত্রে চাকরির সুরক্ষা দিতে হবে। ওসির মতো মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা যেন অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার বা মিথ্যা মামলা দায়ের করতে বাধ্য না হন।
প্রশিক্ষণের মান উন্নত করতে আধুনিকায়িত প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। সকল ক্যাডারের মধ্যে দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের প্রশাসনে অন্তর্ভুক্ত করতে ল্যাটারাল এন্ট্রি ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি দক্ষতার অভাব দূর করতে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
শিক্ষক, ক্লাস টু কর্মকর্তা, এবং অন্যান্য পদে নিয়োগের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করা উচিত। একটি কমিশনের ওপর সব ধরনের দায়িত্ব চাপানো অকার্যকর।
বর্তমান ক্যাডার ব্যবস্থা ভেঙে সার্ভিসভিত্তিক নিয়োগ ও পদোন্নতির পদ্ধতি চালু করা উচিত। প্রশাসন, পুলিশ, এবং অন্যান্য সেক্টরে আলাদা পরীক্ষা এবং পেশাভিত্তিক পদোন্নতির ব্যবস্থা করলে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বাড়বে। জনসাধারণ আশা করে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিজেদের প্রভু নয়, সেবক মনে করবে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময় এবং ব্যয়ের পরিমাণ কমাতে হবে। পাশাপাশি, দুর্নীতি রোধে কড়া ব্যবস্থার প্রয়োজন।
জনপ্রশাসনকে যুগোপযোগী ও জনবান্ধব করতে সংস্কার অপরিহার্য। এই সংস্কারের মাধ্যমে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া এই উদ্যোগ সফল হবে না। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে জনগণের প্রত্যাশা ও বাস্তব সমস্যাগুলো মাথায় রেখে একটি কার্যকর রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।