নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন, আইন সংস্কার, এবং নির্বাচন ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়ানো জনগণের প্রত্যাশার কেন্দ্রে রয়েছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
- নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়ন: সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি।
- তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন: সংবিধান সংস্কার প্রয়োজন হলেও, এটি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা আনতে কার্যকর হতে পারে।
- আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি: নারী প্রতিনিধিত্ব ও তৃণমূলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই পদ্ধতি প্রয়োজন।
- স্থানীয় নির্বাচনের অগ্রাধিকার: জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব যৌক্তিক। এটি কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় স্তরে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট নিশ্চিত করবে।
কমিশনের অন্যতম সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদের মতামত অনুযায়ী, স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে একটি সংহত কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসা সময়ের দাবি। বিভিন্ন সংস্থার আলাদা আলাদা আইনের পরিবর্তে একটি সমন্বিত আইন তৈরি করলে খরচ, জনবল ও সময় সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। উদাহরণস্বরূপ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, তবে মাত্র ৬০০ কোটি টাকার বাজেট ও ৪৫ দিনের সময়ের মধ্যে তা সম্ভব।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়নে সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ পরিস্থিতিতে, কমিশনের উচিত বিকল্প প্রস্তাবনা নিয়ে এগিয়ে আসা। উদাহরণস্বরূপ,
- ‘না’ ভোট পুনঃপ্রবর্তন
- মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধে ব্যবস্থা
- ভোটার তালিকা হালনাগাদ
- অঞ্চলভিত্তিক প্রার্থী পরিচিতি প্রচারণা
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি মজবুত করার এ প্রচেষ্টা সফল করতে কমিশনকে সর্বস্তরের মতামত গ্রহণ এবং সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচনকে সংহত কাঠামোতে নিয়ে আসার মাধ্যমে ব্যয় সাশ্রয় ও কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব।