বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বকে অগ্রগণ্য ধরা হলেও, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ভূমিকা অপরিসীম। তিনি ছিলেন শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের মুক্তির প্রতীক, যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধেও সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভাসানী একাধিকবার পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার বিষয়গুলো তার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তুলে ধরেছেন। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান—সব ক্ষেত্রেই তিনি স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার ধারণাকে প্রচার করেছেন। কাগমারী সম্মেলনে তার বিদায়ী বক্তব্য, “আসসালামু আলাইকুম,” ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
মুক্তির দিশা: কাগমারী থেকে পল্টন
১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে তিনি পূর্ব বাংলার জনগণের উপর শোষণের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তোলেন এবং বলেন, “আগামী ১০ বছরের মধ্যে পূর্ব বাংলার মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানকে বিদায় জানাবে।” এই বক্তব্যই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ বপন করেছিল। পরবর্তী সময়ে, ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে সর্বদলীয় সম্মেলনে তার স্বাধীনতার আহ্বান বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করে।
স্বাধীনতার জন্য ঐক্যের বার্তা
মওলানা ভাসানী বিশ্বাস করতেন যে, স্বাধীনতার জন্য রাজনৈতিক ঐক্য অপরিহার্য। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর তিনি বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “মুজিবকে বিশ্বাস করুন, কারণ তিনি জাতির মুক্তি আনতে পারবেন।” তার এই সমর্থন দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
মওলানা ভাসানীর দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতৃত্ব স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করেছে। তিনি শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার কথাই বলেননি, বরং অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। ইতিহাসের আলোকে বলা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা ভাসানী—এই দুই মহান নেতার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করে।