Search
Close this search box.

শুক্রবার- ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নেতৃত্ব সংকটে আওয়ামী লীগ: ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত?

নেতৃত্ব সংকটে আওয়ামী লীগ
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমানে চরম নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে দল পুনর্গঠন করা কঠিন হয়ে পড়বে, এমনকি বিভক্তির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান মনে করেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে ভাবমূর্তির সংকট এবং নেতৃত্বের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ফলে সংগঠনের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বাইরে দলকে পুনর্গঠিত করা কঠিন হবে, কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং পুরো দলের নিয়ন্ত্রণ তার ওপর নির্ভরশীল।” তিনি আরও যোগ করেন, “বিগত বছরগুলোর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কৌশল জনগণের ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যার ফলে গণ-অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে।”

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর শেখ হাসিনা নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেন এবং ২১ বছরের প্রচেষ্টায় দলকে ক্ষমতায় ফেরান। তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের কারণে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছাত্রদের ওপর সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়নের ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে, যা দলটির প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়।

বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহফুজ আলম বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গণতান্ত্রিক সংস্কার বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা। ২০২৬ সালের প্রথম দিকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করা হবে।

আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত অবস্থানে নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রিয়াজ মনে করেন, দলটির পুনরুদ্ধারের জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হবে: বিগত ১৬ বছরের শাসনামলের ভুল সিদ্ধান্তগুলোর জন্য ক্ষমা চাওয়া। বর্তমান নীতিগুলি পুনর্বিবেচনা করা। শেখ হাসিনার পরিবারের কেউ যাতে ভবিষ্যতে নেতৃত্বে না আসে তা নিশ্চিত করা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর জন্য স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করা। তিনি বলেন, এই শর্তগুলো পূরণ না করলে আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক পুনরুজ্জীবন কঠিন হবে।

দলের অনেক সিনিয়র নেতা এখনো শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলেও, মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেক নেতাকর্মী বিদেশে আত্মগোপনে আছেন অথবা প্রকাশ্যে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় দিতে ভয় পাচ্ছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলটি ‘টপ-ডাউন’ কাঠামোর কারণে জনসমর্থন হারিয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম আল-জাজিরাকে বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। শিগগিরই তা প্রমাণ হবে। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো দেশ বা পক্ষের নাম উল্লেখ করেননি।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ইসলামপন্থী গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দলীয় কাঠামোর দুর্বলতা ও জনবিচ্ছিন্নতাই আওয়ামী লীগের পতনের মূল কারণ।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ বলেন, অন্যায়, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে। জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া দলটির পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ যদি নেতৃত্ব সংকট নিরসন করতে না পারে এবং দলীয় পুনর্গঠনের জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ না করে, তবে ভবিষ্যতে দলটি আরও বড় সংকটে পড়তে পারে। বর্তমানে দলটির পুনরুত্থান সম্ভব কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।

সূত্র: আল-জাজিরা

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়