
ইফতারের সুন্নত সমূহ:
সময় হলে সাথে সাথে ইফতার করা নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নত। খেজুর বা খুরমা দিয়ে ইফতার করা সর্বাপেক্ষা উত্তম; যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সাদা পানি দিয়ে ইফতার করা। এরপর যে কোন মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে ইফতার করাও ভালো।আর এটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে যে কোন হালাল খাদ্য দিয়ে এমন কি শুধু পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। হাদিসের বর্ণনায় থেকে সুস্পষ্ট। নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করবে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে কেননা তাতে বরকত কল্যাণ রয়েছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি আনন্দ। এক ইফতারের সময়, দুই তার রবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। (বুখারী ও মুসলিম)
নিয়মিত খাওয়া দাওয়ার করার সময় যে সব শিষ্টাচার অনুসরণ করতে হয়, তা ইফতারের সময়ও অনুসরণ করতে হবে। তবে ইফতারের রয়েছে বিশেষ কিছু শিষ্টাচার।
সময় হওয়ার পর ইফতার করা। সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে কিংবা মাগরিবের আযানের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার শুরু করে দেওয়া সুন্নত। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন লোকেরা তত দিন পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা ইফতার দ্রুত সম্পন্ন করবে। হাদিসে এসেছে যে ব্যক্তি কোন রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করাবে, সে ওই ব্যক্তির রোজার সমান সোয়াব লাভ করবে। ইফতারের সময় দোয়া করা ,হাদীসে এসেছে ইফতারের সময় সাধারণত রোজাদারের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। (ইবনে মাজাহ)
ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা। অন্য কাজে ব্যস্ত না হয়ে ইফতারে মনোযোগ দেয়া। বেশি বেশি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। খেজুর কিংবা সাদা পানি দিয়ে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ আদায় করা। ইফতারের সময় ভারী খাবার না খাওয়া। মাগরিবের নামাজ আদায় করে তৃপ্তিসহ খাবার খাওয়া। তাতে শরীর সুস্থ ও সবল থাকে।
ইফতারের আগের দোয়া:
বাংলা উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু।’
বাংলা অর্থ: ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ মুরসাল, মিশকাত)
ইফতারের পরের দোয়া :
বাংলা উচ্চারণ: ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’
বাংলা অর্থ: ‘(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
সেহেরির সুন্নত সমূহ:
সেহেরী খাওয়ার সুন্নত। যদি ক্ষুধা না লাগে কিংবা খেতে ইচ্ছা না করে তবুও দুই এক লোকমা হরেও খাবার খেতে হবে। পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়, এক ঢোক পানি পান করেও সেহেরী সুন্নত আদায় হবে।( রদ্দুল মুহতাব ২/ ৪১৯)
হাদিস শরীফে এসেছে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন তোমরা সেহেরী খাও- কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে। (সহি ও মুসলিম ১/ ৩৫০) এক অন্য আরেক হাদীসে বলা হয়েছে, সেহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ সুতরাং তা পরিত্যাগ করো না। কারণ যারা সেহেরি খায় তাদের উপর আল্লাহর বরকত বর্ষিত হয় এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মুসনাদে আহমদ ৩/ ১২)
সুবহে সাদিকের মাঝামাঝি সময় সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এত দেরি করে করা মাখরুহ যে ,সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। হযরত ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সঙ্গে সেহরি খেলাম তারপর তিনি নামাজের জন্য দাঁড়ালেন আমি বললাম আজান ও সেহেরির মধ্যে ব্যবধান কি (পরিমাণ) ছিলো? তিনি বললেন ৫০ আয়াত পরিমাণ (বুখারী শরীফ ও মুসলিম)
ইফতার ও সেহরীর সময়ের রাসূল সাঃ খেজুর খেতেন তাই ইফতার ও সেহেরিতে খেজুর খাওয়া সুন্নত
রোজার নিয়ত:
আরবি নিয়ত : নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
বাংলায় নিয়ত : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।