ইসলামে ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ হলো ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস। মহান আল্লাহ বিশেষ এক শ্রেণির সৃষ্টি করেছেন, যাদের আমরা চর্মচক্ষে দেখতে পাই না। তাদের বলা হয় ফেরেশতা। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, তারা নূরের তৈরি এবং আল্লাহর নির্দেশের বাইরে কোনো কাজ করেন না। তারা পুরুষ বা মহিলা নন, বরং এক বিশেষ সৃষ্টিজীব। ফেরেশতাদের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে: নবীদের কাছে ওহী পৌঁছানো, মানুষের আমলনামা লিপিবদ্ধ করা, প্রাণহরণ করা, বৃষ্টি এবং প্রকৃতির অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা ইত্যাদি।
বিশিষ্ট চারজন ফেরেশতা হলেন: হযরত জিবরাঈল (আ.) – ওহী পৌঁছানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত। হযরত মীকাঈল (আ.) – বৃষ্টি এবং জীবিকা সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত। হযরত ইসরাফীল (আ.) – কিয়ামতের দিন শিঙ্গা ফুঁকবেন। হযরত আজরাঈল (আ.) – মানুষের রুহ কবজ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত। ফেরেশতাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখা ঈমানের অপরিহার্য অংশ। যে কেউ ফেরেশতাদের সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে, সে ঈমান থেকে বিচ্যুত বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ তাআলা আরেকটি অদৃশ্য সৃষ্টি করেছেন, যাদের বলা হয় জিন। কুরআন ও হাদিসে জিনদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে এবং তারা মানুষের মতোই স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী। তাদের মধ্যে ভালো ও মন্দ দুই শ্রেণি রয়েছে। তারা খাওয়া-দাওয়া করে, বংশবৃদ্ধি করে এবং মৃত্যুবরণ করে।
তারা আমাদের দৃষ্টির বাইরে অবস্থান করে, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মানুষ তাদের দেখতে পারে। তাদের মধ্যে মুসলিম ও কাফির উভয় শ্রেণি রয়েছে। ইবলিস শয়তান জিনদের মধ্যকার সবচেয়ে বিদ্রোহী এবং আল্লাহর অভিশপ্ত সৃষ্টি। হাশরের ময়দানে জিনদেরও বিচার করা হবে। মানুষের উপর জিনদের প্রভাব থাকতে পারে, তবে কুরআন ও সহিহ হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা ও নির্দিষ্ট দোয়ার মাধ্যমে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ফেরেশতা ও জিনদের অস্তিত্বে বিশ্বাস ঈমানের অংশ। ফেরেশতারা নিষ্পাপ এবং কেবল আল্লাহর আদেশ পালন করেন। জিনদের মধ্যে ভালো-মন্দ উভয় প্রকারই রয়েছে এবং তাদের আচরণ মানুষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর স্মরণ করা জরুরি।
এই পর্বের মাধ্যমে ইসলামে ফেরেশতা ও জিনদের প্রতি বিশ্বাসের গুরুত্ব আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। আশা করি, এটি পাঠকদের জন্য উপকারী হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে রাখুন। আমীন।
সহিহ ঈমানের কষ্টিপাথর | পর্ব-০২