
ঈমান হল দৃঢ় বিশ্বাস, যা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রতিটি বিধান ও আহকামের প্রতি অকাট্য প্রমাণসহ আত্মিক স্বীকৃতির মাধ্যমে স্থাপিত হয়। একজন মুমিনের জন্য ঈমান শুধু মুখের স্বীকারোক্তি নয়, বরং তা অন্তরের গভীরতম অনুভূতি ও কর্মের মাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়া জরুরি।
সঠিক আমল ও নেক কাজের মাধ্যমে ঈমান শক্তিশালী হয়, অন্যদিকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনে গাফিলতি ঈমানকে দুর্বল করে ফেলে। যদি এই দুর্বলতা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ব্যক্তি অনুতপ্ত না হয়, তবে ঈমান সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কুফর শব্দের অর্থ আড়াল করা বা অস্বীকার করা। ইসলামী পরিভাষায়, কুফর হলো নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ধর্মীয় বিধানসমূহের কোনো একটি বা একাধিক বিষয়ে সংশয় পোষণ করা, তা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা ব্যঙ্গ করা।
কোনো ব্যক্তি যদি কুফরের শিকার হয়, তবে তার পূর্ববর্তী সকল আমল ও ইবাদত বাতিল হয়ে যায় এবং বিবাহিত হলে বৈবাহিক সম্পর্কও অকার্যকর হয়ে যায়। তাই যে কেউ এই অবস্থায় পড়লে, তাকে নতুন করে ঈমান গ্রহণ করতে হবে এবং তওবা করে বিয়ে পুনরায় সম্পন্ন করতে হবে।
কুফরের বিভিন্ন ধরন:
১. কুফরে ইনকার: এটি সেই কুফর, যেখানে ব্যক্তি অন্তর ও মুখের মাধ্যমে দ্বীনের কোনো বিধান সরাসরি অস্বীকার করে। যেমন: মক্কার কাফিররা ইসলামের শিক্ষা প্রত্যাখ্যান করেছিল।
২. কুফরে জুহুদ: এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তি অন্তরে সত্য গ্রহণ করলেও মুখে তা অস্বীকার করে। উদাহরণস্বরূপ, মদিনার ইয়াহুদিরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াত সত্য জেনেও তা প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছিল।
৩. কুফরে ‘ইনাদ: যে ব্যক্তি অন্তরে ইসলামের সত্যতা মেনে নেয় এবং মুখেও তা স্বীকার করে, কিন্তু ইসলামের বিধান পালন করতে অস্বীকার করে, সে কুফরে ‘ইনাদ-এর অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রেণির মানুষের মধ্যে অনেক নামধারী মুসলমানও থাকতে পারে, যারা দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করে না।
৪. কুফরে যানদাহকাহ: এটি সবচেয়ে ধূর্ত কুফরের একটি রূপ, যেখানে ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে, তবে দ্বীনের কোনো বিধানের এমন ব্যাখ্যা প্রদান করে যা ইসলামী উম্মাহর সর্বসম্মত মতামতের বিরোধী। যেমন: কাদিয়ানিরা খতমে নবুওয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের মিথ্যা নবীকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে।
ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টভাবে বোঝা এবং কুফরের যে কোনো রূপ থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। ঈমানের সঠিক ব্যাখ্যা গ্রহণ এবং এর ওপর অবিচল থাকার মাধ্যমেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারবো।