
শবে বরাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ রাত। মুসলিম সমাজে এটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়। ইসলামী পরিভাষায় একে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যরাত বলা হয়। মূলত, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও মাগফিরাতের দরজা খুলে দেন। তাই এ রাত ইবাদত, দোয়া ও আত্মশুদ্ধির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিস শরিফে বেশ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন: “আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে সৃষ্টিজগতের প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ, ১/৪৪৫) এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, এ রাতটি রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রাত। তবে এ রাতকে নিয়ে অতিরঞ্জন বা বিদআত পালন ইসলামসম্মত নয়।
শবে বরাতে করণীয়
১. ইবাদত-বন্দেগি: এ রাতে নফল নামাজ আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার ও দোয়া করা উত্তম আমল। তবে বিশেষ পদ্ধতিতে নামাজ পড়া বা নির্দিষ্ট রাকাত নির্ধারণ করা ভিত্তিহীন।
২. তওবা ও ইস্তেগফার: এ রাতে বেশি করে তওবা ও ইস্তেগফার করা উচিত। কারণ, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য ক্ষমার দরজা খুলে দেন।
৩. দোয়া করা: শবে বরাতে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ রয়েছে। নিজের ও পরিবারের জন্য কল্যাণ কামনা করা উত্তম আমল।
৪. কবর জিয়ারত: কবর জিয়ারত করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। তবে এটিকে শবে বরাতের বিশেষ আমল মনে করা ঠিক নয়।
শবে বরাতে বর্জনীয়
১. বিদআত ও কুসংস্কার: বিভিন্ন সমাজে শবে বরাত উপলক্ষে কিছু বিদআত প্রচলিত আছে, যেমন- বিশেষ ধরনের নামাজ পড়া, নির্দিষ্টসংখ্যক সুরা পাঠ করা, আতশবাজি ও আলোকসজ্জা করা, এসব বিদআত ইসলামের মূল চেতনাবিরোধী। তাই এগুলো পরিত্যাগ করা জরুরি।
২. ভাগ্য নির্ধারণের বিশ্বাস: অনেকে মনে করেন, এ রাতে ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়, যা ভুল ধারণা। কোরআনের ভাষ্যমতে, ভাগ্য নির্ধারণ হয় ‘লাইলাতুল কদর’-এ, শবে বরাতে নয়।
৩. ভুরিভোজ ও মিষ্টি বিতরণ: কিছু দেশে শবে বরাতে হালুয়া-রুটি ও অন্যান্য খাবার বিতরণ করা হয়। এটি মূলত লোকাচার, ইসলামের মূল শিক্ষা নয়।
শবে বরাত একটি ফজিলতপূর্ণ রাত হলেও এটি নিয়ে অতিরঞ্জন করা ঠিক নয়। এ রাতে ইবাদত, তওবা ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা উচিত। বিদআত, কুসংস্কার ও অমূলক বিশ্বাস থেকে দূরে থেকে আমরা শবে বরাতের প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারব।