চায়ের আড্ডা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গায় গিবতের ভয়াবহ প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ ইসলামে গিবতকে জাহান্নামের গভীর শাস্তির কারণ বলা হয়েছে। গিবত শুধু ইমানকেই ধ্বংস করে না, বরং পরকালে ভয়ানক শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ইসলামি শরিয়তে গিবত বা কুৎসা রটনাকে ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে একে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অথচ মসজিদ থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গাতেই মানুষ হরহামেশা এই গুরুতর গুনাহের মধ্যে লিপ্ত হচ্ছে।
কোরআনে গিবতের ভয়াবহতা তুলে ধরে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কারো গিবত না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়াকে পছন্দ করবে? তোমরা তো একে ঘৃণাই করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)। অন্য আয়াতে গিবতকারীদের জন্য দুর্ভোগের ঘোষণা এসেছে (সুরা হুমাজাহ, আয়াত: ০১)।
হাদিসে গিবতকে ব্যভিচারের চেয়েও ভয়াবহ বলা হয়েছে। কারণ ব্যভিচার তওবা করলে মাফ হয়, কিন্তু গিবতের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষমা না করলে তওবা কবুল হয় না। এ ছাড়া গিবতকে ইমান ধ্বংসকারী, লাঞ্ছনার কারণ এবং পরকালে ভয়াবহ শাস্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, মানুষ সাধারণত পাঁচটি মাধ্যমে গিবতে জড়ায়—মুখ, কান, অন্তর, ইঙ্গিত ও লেখা। কথাবার্তা, শ্রবণ, অন্তরের অনুমোদন, অঙ্গভঙ্গি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির মাধ্যমেও গিবতের মতো গুরুতর গুনাহ সংঘটিত হয়।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) গিবতের সংজ্ঞা স্পষ্ট করে বলেছেন—ভাইয়ের এমন কোনো দোষ নিয়ে আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে, সেটিই গিবত। আর যদি সেই দোষ বাস্তবে না-ও থাকে, তবে তা অপবাদ হিসেবে গণ্য হবে।
ইসলামি আলেমদের মতে, গিবত শুধু একটি সামাজিক ব্যাধি নয়, বরং এটি এমন একটি পাপ যা ব্যক্তি ও সমাজের শান্তি নষ্ট করে এবং আখেরাতের মুক্তিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।