Search
Close this search box.

বৃহস্পতিবার- ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইসলামি ব্যাংকিং ও প্রচলিত ব্যাংকিং: পার্থক্যের ব্যাখ্যা

আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুনিয়ায় ইসলামি ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এক প্রাসঙ্গিক বিষয়। আজকের বিশ্বে প্রচলিত ও ইসলামি ব্যাংকিংয়ের মাঝে কি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষত, অনেকে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন যখন দেখেন যে দুটো ব্যবস্থায় মুনাফা অর্জন ও আদায়ের কার্যক্রম দেখতে প্রায় একই ধরনের। তবে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের শিকড় অনেক গভীরে, যা ধর্মীয় নীতিমালা ও ব্যবসার নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

ইসলামি ব্যাংকিংয়ের মূল ধারণা

ইসলামি ব্যাংকিং, যা শরীয়াহ্-ভিত্তিক ব্যাংকিং হিসেবেও পরিচিত, ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেনের সময় শরীয়াহ্ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। ইসলামি ব্যাংকিং মুনাফা অর্জনকে ব্যবসার স্বাভাবিক অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করলেও, তা সুদের পরিবর্তে সম্পত্তি ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করে। এই ব্যবস্থায় “মুরাবাহা” ও “মুশারাকা” নামে পরিচিত দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুনাফা আদায় করা হয়।

মুরাবাহা পদ্ধতি: এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী একটি পণ্য কিনে নেয় এবং পরে তা গ্রাহকের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক জানেন যে ব্যাংক তার ক্রয়কৃত পণ্যে মুনাফা রাখছে, যা শরীয়াহ্ অনুযায়ী বৈধ বলে গণ্য করা হয়। যেমন, একটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য ১০০,০০০ টাকা প্রয়োজন হলে প্রচলিত ব্যাংক সুদ ধার্য করে ১১০,০০০ টাকা পরিশোধ করতে বলবে। কিন্তু ইসলামি ব্যাংক একই মোটরসাইকেল কিনে গ্রাহকের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে, এবং এখানেই মূল পার্থক্য গড়ে ওঠে।

মুশারাকা পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে একটি যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালিত হয়। গ্রাহক ও ব্যাংক উভয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে মূলধন বিনিয়োগ করেন এবং লাভ-লোকসানের অংশীদার হন। এটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, যেমন ফ্ল্যাট কেনা, ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হয়। গ্রাহক তার মালিকানার অংশ বাড়িয়ে নিতে থাকে, আর ব্যাংকের অংশ ক্রমশ কমে আসে।

অর্থনৈতিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ

ইসলামি ব্যাংকিং প্রক্রিয়া অর্থনীতির ভাষায় বাজার ভারসাম্য ও চাহিদা-যোগানের নীতিমালা মেনে চলে। এখানে চুক্তি হয় পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে, এবং ব্যবসায়িক সম্পর্কের নিয়ম অনুযায়ী। ইসলামি ব্যাংকিংয়ের সারাংশ হলো ব্যবসায় চুক্তি বা লেনদেনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকার স্থানান্তর করা, যা শরীয়াহ্ আইন মেনে চলে।

পার্থক্যের মূল ব্যাখ্যা

অনেকে বলবেন, ইসলামি ব্যাংকিংয়ে মুনাফা অর্জনের ব্যবস্থা ও প্রচলিত ব্যাংকের সুদ সমান। কিন্তু, পার্থক্যটা ঠিক যেভাবে হালাল মাংস ও অন্য মাংসের প্রস্তুতির পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে, সেভাবেই এখানে লুকিয়ে আছে। একটি বৈধ আরেকটি অবৈধ, যদিও দেখলে বা ফলাফলে তেমন কোনো পার্থক্য চোখে পড়ে না।

শ্রেণিবিভাগ ও কৃত্রিম সামঞ্জস্য

ইসলামি ব্যাংকিং অর্থনীতিতে একটি কৃত্রিম সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শরীয়াহ্ কমিটি বা বোর্ড ব্যাংকের কার্যক্রম তদারকি করে সঠিক নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করে। গ্রাহকরা এই বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে, শরীয়াহ্ অনুযায়ী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হলে তার দায়-দায়িত্ব শরীয়াহ্ কমিটির ওপর বর্তায়।

ইসলামি ব্যাংকিং নিয়ে আলোচনার বিষয়বস্তুতে অনেকেই নিজেদের মতামত প্রকাশ করে থাকেন। তবে ইসলামি অর্থনীতির পণ্ডিতরা মনে করেন, এই ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ধর্মীয় নীতি মেনে একটি সুরক্ষিত ও ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামোর মধ্যে আনা হয়েছে, যা উপকারী।

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়