আজকাল উদ্যোক্তা হওয়া কোন স্বপ্ন নয়, বরং সামান্য প্রয়াসের ফলাফল। সফল উদ্যোক্তারা কীভাবে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছায় সেই লক্ষ্য জেনে নিজের একটি সুন্দর লক্ষ নির্ধারণ করলেই ভালো উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব।
উদ্যোক্তা হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি নতুন পণ্য বা সেবা তৈরি করেন, যা আগে কখনো কেউ ভাবেনি বা নতুনভাবে পুরানো কোনো ব্যবসা শুরু করেন। উদ্যোক্তা নিজে সমস্ত ব্যবসার ধাপ নির্ধারণ করেন—যেমন কিভাবে শুরু করবেন, কিভাবে চালাবেন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী হবে। একজন উদ্যোক্তা হতে হলে সাধারণ মানুষ থেকে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হয়।
স্বাধীনতা
উদ্যোক্তা হলে নিজের বস নিজেই হওয়া যায়। নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার স্বাধীনতা থাকে। উদ্যোক্তা হওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো স্বাধীনতা অর্জন। উদ্যোক্তারা তাদের নিজস্ব সময় নির্ধারণ করতে পারেন। তারা কাজের সময় এবং অবসর সময় নিজেরা ঠিক করতে পারেন, যা একটি চাকরির ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এই স্বাধীনতা তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা নিজেরাই তাদের ব্যবসার প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
নিজস্ব ব্যবসা শুরু করে উদ্যোক্তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ পান। তারা তাদের নিজের আইডিয়া ও দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত করতে পারেন এবং সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে পারেন। এতে তার আর্থিক স্বাধীনতা থাকে। সফল উদ্যোক্তারা অনেক সময় চাকরিজীবীদের চেয়ে বেশি আয় করেন।
সৃজনশীলতার প্রকাশ
উদ্যোক্তারা তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারেন। তারা নতুন পণ্য, সেবা, বা ব্যবসার পদ্ধতি তৈরি করতে পারেন যা তাদের নিজের মত অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
আর্থিক লাভ
যদি উদ্যোক্তা সফল হন, তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। স্বপ্ন পূরণ করার পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা অনেক সময় চাকরিজীবীদের চেয়ে বেশি আয় করেন।
সমাজে অবদান
উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখা সম্ভব। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি নতুন পণ্য ও সেবা তৈরি করতে পারেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।
[caption id="attachment_79488" align="alignright" width="483"] সফল উদ্যোক্তা হতে প্রয়োজন[/caption]
একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি। এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাকে সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে তোলে:
সৃজনশীলতা হল উদ্যোক্তার অন্যতম প্রধান গুণ। এটি উদ্যোক্তাকে নতুন ধারণা, নতুন পণ্য বা সেবা উদ্ভাবনের জন্য সৃজনশীল চিন্তা অপরিহার্য এবং ব্যবসা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সৃজনশীলতার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তাদের প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা হতে পারে এবং নতুন বাজারে প্রবেশ করতে পারে।
একজন উদ্যোক্তাকে নেতৃত্ব দিতে জানতে হবে। তাকে প্রতিষ্ঠান বা দলের সদস্যদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। সফল উদ্যোক্তার নেতৃত্বের গুণগুলি কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা তাদের ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি ব্যক্তিগত এবং পেশাগত বিকাশেও সাহায্য করে। এই গুণাবলীর মাধ্যমে তারা তাদের টিমকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারেন এবং নিজের লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হন।
উদ্যোক্তারা সাধারণত ঝুঁকি নিতে সাহসী হন। নতুন কিছু তৈরি করতে গেলে ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। সফল উদ্যোক্তার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা তাদের সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ঝুঁকি নেওয়া মানে কেবল অজানার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়া নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনা, বিশ্লেষণ এবং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা একজন উদ্যোক্তাকে নতুন সুযোগের দিকে এগিয়ে যেতে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।
যেকোনো ব্যবসার সময় বিভিন্ন সমস্যা আসতে পারে। একজন উদ্যোক্তাকে সেই সমস্যাগুলোর সঠিক ও দ্রুত সমাধান করতে জানতে হবে। সফল উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তাদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তাদেরকে ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং ব্যবসার উন্নতি করতে সহায়তা করে।
একজন সফল উদ্যোক্তার জন্য যোগাযোগের দক্ষতা অপরিহার্য। সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে পারলে ব্যবসার উন্নতি সহজ হয়। সফল উদ্যোক্তার জন্য যোগাযোগের দক্ষতা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এই দক্ষতা উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসা পরিচালনা, কর্মী পরিচালনা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। সফল উদ্যোক্তাদের যোগাযোগের দক্ষতার কিছু প্রধান দিক হলো:
ক. স্পষ্টতা (Clarity)
সফল উদ্যোক্তারা তাদের বক্তব্য স্পষ্টভাবে এবং সহজভাবে প্রকাশ করতে জানেন। তারা জটিল ধারণাগুলিকে সরলভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন, যাতে শ্রোতারা সহজে বুঝতে পারেন।
খ. সক্রিয় শোনা (Active Listening)
সক্রিয়ভাবে শোনা একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের দক্ষতা। সফল উদ্যোক্তারা অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেন। তারা প্রশ্ন করেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন।
গ. আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ (Interpersonal Communication)
উদ্যোক্তারা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারদর্শী হন। তারা সহানুভূতি, শ্রদ্ধা এবং আস্থার মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
ঘ. প্রেরণা দেওয়া (Motivating)
একজন সফল উদ্যোক্তা তার টিম সদস্য ও কর্মীদের প্রেরণা দিতে জানেন। তারা উত্সাহব্যঞ্জক বক্তব্য এবং প্রশংসার মাধ্যমে দলের মনোবল বাড়িয়ে তোলেন।
ঙ. দ্বন্দ্ব পরিচালনা (Conflict Management)
দল বা প্রতিষ্ঠানে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে, সফল উদ্যোক্তারা সেই দ্বন্দ্ব দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সমাধান করতে পারেন। তারা সমস্যা নিরসনে মধ্যস্থতা করেন এবং একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
চ. নেটওয়ার্কিং (Networking)
সফল উদ্যোক্তারা বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট, সম্মেলন এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তারা নতুন সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটানোর জন্য নতুন সুযোগ খুঁজে পান।
উদ্যোক্তা হওয়া মানে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া এবং সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা। এই প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তারা ব্যক্তিগতভাবে উন্নতি করেন এবং নতুন দক্ষতা অর্জন করেন।
লেখক: মোঃ মাহবুবুল ইসলাম (তরুণ উদ্যোক্তা ও কলামিস্ট)