আন্তর্জাতিক ন্যূনতম করপোরেট কর চুক্তিতে শামিল হয়েছে বিশ্বের ১৩৬টি দেশ। যা কার্যকর হলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যে দেশেই ব্যবসা করুক না কেন, সেই দেশের সরকারকে ন্যূন্যতম ১৫ শতাংশ করপোরেট কর দিতে বাধ্য থাকবে। তবে শর্ত হচ্ছে, অংশগ্রহণকারী সব দেশকে ডিজিটাল পরিষেবা কর বা ওই ধরনের যাবতীয় ব্যবস্থা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। এমনকি আগামী দিনে তা আরোপ করা হবে না বলেও দিতে হবে প্রতিশ্রুতি।
আন্তর্জাতিক কর সংস্কারের লক্ষ্যে নীতি বদলই চুক্তির উদ্দেশ্য। এটি কার্যকর করার দায়িত্বে থাকা অর্গানাইজ়েশন অব ইকনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বলেছে, ৮ অক্টোবর (শুক্রবার) থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা আন্তর্জাতিক কর নিয়ে বহুপাক্ষিক সম্মেলন শুরু হওয়া পর্যন্ত কোনো কোম্পানির ওপর ডিজিটাল কর চাপাতে পারবে না কোনো দেশ। আয়কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই করের দুটি অংশ। এক, ব্যবসা করে যে দেশে বিদেশি সংস্থার মুনাফা হচ্ছে, সেই দেশে ওই মুনাফার উপরেই ন্যূনতম ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। দুই, লাভ বেশি হলে ২৫ শতাংশ পর্যন্তও কর বসতে পারে।
বহুজাতিকেরা এক জায়গায় ব্যবসা করে আর আরেক জায়গায় মুনাফা দেখায়, এই ফাঁকিবাজি বন্ধ করার জন্য অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চলছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি ডিজিটাইজড হওয়ার কারণে এই ফাঁকিবাজির পরিসর দিন দিন আরও বড় হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, করপোরেট কোম্পানিগুলো অস্থাবর সম্পত্তির নিবন্ধন করছে ট্যাক্স হেভেন বা যেখানে করহার খুব কম, তেমন দেশগুলোতে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোনো দেশে করপোরেট করহার ১ শতাংশ হ্রাস করার অর্থ হলো, কর-পূর্ব মুনাফা ১ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করা। এই হার দিনের পর দিন শুধু বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ এই পলায়নরত মুনাফা হাত করতে করহার কেবল কমাচ্ছে।
এই টাকা পাচারের কারণে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলো রাজস্ব হারাচ্ছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর যে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে, তাতে এই কোম্পানিগুলোর ট্যাক্স হেভেনে টাকা পাচার করার প্রবণতা কিছুটা কমবে। আর বহুজাতিকদের ব্যবসাস্থলে করারোপ করার যে অধিকার দেশগুলোর হাতে আসছে, তাতে যা ঘটবে তা হলো করের ভিত্তি নিয়ে জালিয়াতি করার ক্ষমতা বহুজাতিকদের কমবে।
তবে অক্সফাম বলছে, ১৫ শতাংশ করপোরেট কর কম হয়ে যাবে। শিল্পায়িত দেশগুলোতে করপোরেট করের গড় হার ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে এই হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা ঠিক হয়নি।
অক্সফামের কর নীতি বিভাগের প্রধান সুসানা রুইজ বিবিসিকে বলেছেন, ‘দারিদ্র্যের হার আবার বাড়তে শুরু করেছে। সঙ্গে বাড়ছে অসমতা। কিন্তু এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য ও অসমতায় রাশ টানা যাবে, এমন সম্ভাবনা কম। বরং অনেক মিল্পায়িত দেশ এই উছিলায় করপোরেট কর হার হ্রাসের চেষ্টা করবে। ফলে গড় করপোরেট কর হার আরও হ্রাসের শঙ্কা আছে।
ওইসিডি-ই জানিয়েছে ন্যূনতম কর্পোরেট করের হার নিয়ে দেশগুলির চুক্তিতে সম্মতির কথা। ১৩ অক্টোবর আমেরিকায় জি-২০ দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে চূড়ান্ত হবে চুক্তি।