Search
Close this search box.

বুধবার- ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও বিপদজনক হতে পারে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও বিপদজনক হতে পারে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও বিপদজনক হতে পারে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) বর্তমান সময়ের একটি অত্যন্ত আলোচিত ও বিতর্কিত প্রযুক্তি। এটি মানুষের জীবনে অসাধারণ পরিবর্তন এনে দিয়েছে, তবে এর বিপরীত দিকও রয়েছে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও বিপদজনক হতে পারে। এই প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবন সহজ করে তুলেছে, তেমনি এর অসতর্ক ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

বেকারত্বের ঝুঁকি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো বেকারত্বের ঝুঁকি। বিভিন্ন সেক্টরে রোবট ও স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের ব্যবহার মানুষের কাজের বিকল্প হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। উৎপাদন শিল্প, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে AI নির্ভর সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। ফলে অনেক মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষেরা এর শিকার হচ্ছেন বেশি, যারা নিজেদের কাজের দক্ষতার কারণে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না।

গোপনীয়তার লঙ্ঘন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত সহজ হয়ে গেছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং সরকার এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও অন্যান্য ডিজিটাল পরিষেবাগুলির মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্যগুলো প্রায়শই গোপনীয়তার লঙ্ঘন করে এবং অনেক ক্ষেত্রে মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সাইবার আক্রমণ এবং হ্যাকিংয়ের ঘটনাও বেড়ে যাচ্ছে। AI ব্যবহার করে উন্নত ম্যালওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত ডেটা চুরি করতে সক্ষম। এছাড়া, অটোনোমাস অস্ত্র ও ড্রোনগুলি ব্যবহার করে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করছে।

নৈতিক ও মানসিক সমস্যা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একটি বড় নৈতিক সমস্যা হলো এর স্বচ্ছতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। AI সিস্টেমের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তগুলি নেয়া হয়, তা প্রায়শই মানুষের জন্য বোধগম্য নয়। এটি মানুষের জীবনে অপ্রত্যাশিত ও অনিয়ন্ত্রিত পরিবর্তন আনতে পারে। এছাড়া, AI ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানুষের মধ্যে মানবিক সংযোগ ও সম্পর্কগুলি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, ফলে মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা বাড়ছে।

মানবজাতির অস্তিত্বের ঝুঁকি

বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও গবেষক স্টিফেন হকিং এবং এলন মাস্কের মত ব্যক্তিত্বগণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, যদি AI সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত না হয়, তবে এটি মানবজাতির জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। উন্নত AI সিস্টেমগুলি স্ব-স্বভাবিকভাবে বিকাশ করতে সক্ষম হলে, তারা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এটি মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি মানুষের জীবনে অসংখ্য সুবিধা এনে দিয়েছে, তবে এর ক্ষতিকর ও বিপদজনক দিকগুলি উপেক্ষা করা উচিত নয়। বেকারত্ব, গোপনীয়তার লঙ্ঘন, নিরাপত্তা ঝুঁকি, নৈতিক ও মানসিক সমস্যা এবং মানবজাতির অস্তিত্বের ঝুঁকি নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব নিয়ে সচেতন হতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক নিয়ন্ত্রণ, নীতি ও নৈতিকতা মেনে AI প্রযুক্তির ব্যবহার। তবেই এই প্রযুক্তি মানুষের কল্যাণে যথাযথভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি কমিয়ে আনা যাবে।

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়