রবিবার- ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রামাদানের গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল ও বিধান – পর্ব ৪

🟢 রোযা মাকরূহ হওয়ার কারণসমূহ

১. কুলি করার সময় গড়গড়া করা ও নাকে বেশি পানি দেওয়া

মাসআলা: রোযা অবস্থায় কুলি করার সময় গড়গড়া করা এবং নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছানো মাকরূহ।

লাকিত ইবনে সাবিরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

(অযু-গোসলের) সময় ভালোভাবে নাকে পানি দাও, তবে রোযাদার হলে নয়।

(তিরমিযী, হাদীস: ৭৬৬; আবু দাউদ, হাদীস: ৯৮৪৪)

২. অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়া

মাসআলা: এমন কাজ করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার নিতান্তই দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমন- শিঙ্গা লাগানো।

(আল-মুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০০)

৩. শরীর থেকে রক্ত বের করা

মাসআলা: রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করলে রোযা ভাঙবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যা রোযাদারকে খুব দুর্বল করে দেয়।

সাবেত আল-বুনানী (রহ.) বলেন, আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, রোযার হালতে শিঙ্গা লাগানোকে আপনারা কি মাকরূহ মনে করতেন? তিনি বললেন, না। তবে এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরূহ হবে।

(সহীহ বুখারী, হাদীস: ১৯৪০)

৪. গীবত, গালি-গালাজ ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া

মাসআলা: রোযার হালতে গীবত করা, গালি-গালাজ করা, টিভি-সিনেমা দেখা, গান-বাজনা শোনা এবং যে কোনো বড় গুনাহে লিপ্ত হলে রোযা মাকরূহ হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখে তখন যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোলে লিপ্ত না হয়।’

(সহীহ বুখারী, হাদীস: ১৯০৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৩৩৬৩)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা ও প্রতারণা ত্যাগ করে না, আল্লাহ তাআলার নিকট তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো মূল্য নেই।’

(সহীহ বুখারী, হাদীস: ১৯০৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৩৩৬২)

🟢 যেসব কাজ রোযাদারের জন্য মাকরূহ নয়

১. কোনো কিছুর স্বাদ নেওয়া

মাসআলা: রোযার হালতে প্রয়োজনে জিহ্বা দ্বারা কোনো কিছুর স্বাদ নেওয়া বা শিশুদের জন্য খাদ্য চিবানো মাকরূহ নয়, তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন স্বাদ গলার ভেতরে চলে না যায়।

ইবরাহীম নাখায়ী (রহ.) রোযাদার মহিলার জন্য বাচ্চার খাবার চিবানোকে দোষের বিষয় মনে করতেন না।

(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৭)

২. সুরমা লাগানো ও সুগন্ধি ব্যবহার

মাসআলা: রোযাদারের জন্য সুরমা লাগানো বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ নয়।

আতা (রহ.) বলেন, ‘রোযাদারের জন্য সুরমা ব্যবহারে কোনো দোষ নেই।’

(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৮)

৩. মিসওয়াক করা

মাসআলা: রোযা অবস্থায়ও মিসওয়াক করা সুন্নত। এমনকি কাঁচা ডাল দ্বারা মিসওয়াক করাও মাকরূহ নয়।

আমির ইবনে রবীয়া (রা.) বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি রোযার হালতে অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি।’

(সহীহ বুখারী ১/২৫৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০০)

হাসান (রহ.)-কে রোযা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রোযা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। মিসওয়াক পবিত্রতার মাধ্যম। অতএব দিনের শুরুতে এবং শেষেও মিসওয়াক করো।’

(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০২)

রোযার হালতে এমন কিছু কাজ রয়েছে যা মাকরূহ, অর্থাৎ তা পরিহার করা উত্তম। আবার কিছু কাজ আছে যা মাকরূহ নয় এবং রোযাদার নির্দ্বিধায় করতে পারে। তাই রমাদানের ফজিলত লাভের জন্য আমাদের উচিত, রোযার আদব ও বিধান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা এবং তা যথাযথভাবে পালন করা।

আগের পর্ব: রামাদানের গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল ও বিধান (পর্ব-৩)

লেখক: ইবনে আবদুল্লাহ

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়