Search
Close this search box.

বুধবার- ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংবিধান সংস্কার: সময়োপযোগী পরিবর্তন ও জনঅংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা

সংবিধান সংস্কার ও জনগণের প্রত্যাশা

বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রের মূল কাঠামো ও পরিচালনার রূপরেখা নির্ধারণ করে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধানের কিছু অংশ যুগোপযোগী করে তোলা জরুরি। বিশেষ করে, গণতন্ত্রের সুরক্ষা, জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

বর্তমান সংবিধান সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্য হলো, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ, এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচনব্যবস্থা প্রবর্তন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, টার্ম লিমিট নির্ধারণ, এবং সংবিধানকে আরও অসাম্প্রদায়িক করার বিষয়গুলোও অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

গণতান্ত্রিক নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা একান্ত প্রয়োজন। এর অভাবেই সাম্প্রতিককালে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক দল এই ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যা জনআস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে।

এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সমাজে লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠার পথে একটি বড় পদক্ষেপ। পাশাপাশি, আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করা হলে প্রতিটি দলের প্রকৃত জনপ্রিয়তার প্রতিফলন ঘটবে। এটি ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।

সংসদীয় কাঠামোতে একটি উচ্চকক্ষ যুক্ত করা এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। উচ্চকক্ষকে পেশাভিত্তিক পার্লামেন্টের রূপ দেওয়া হলে নীতিনির্ধারণ আরও কার্যকর হবে।

একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এই পরিবর্তনগুলি কীভাবে কার্যকর হবে। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য একটি সাংবিধানিক সংসদ প্রয়োজন। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখা ছাড়া কোনো পরিবর্তনই দীর্ঘমেয়াদে সফল হবে না।

জাপানের সংবিধান সংস্কারের উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে। চাপিয়ে দেওয়া কোনো সংবিধান দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। বাংলাদেশেও এ বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।

সুপারিশমালা

  • নির্বাচিত সাংবিধানিক সংসদ: সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব জনগণের প্রতিনিধিদের ওপর ন্যস্ত করা।
  • জনমত সংগ্রহ: গণভোট বা মতামত নেওয়ার মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।
  • সংস্কারের স্বচ্ছতা: প্রতিটি পরিবর্তনের যৌক্তিকতা জনসমক্ষে উপস্থাপন করা।
  • নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব আইনে বাধ্যতামূলক করা।

সংবিধান হলো রাষ্ট্রের মূল দলিল। এর সংস্কারে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করা অপরিহার্য। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ এবং সময়োপযোগী পরিবর্তনের মাধ্যমে সংবিধানকে আরও কার্যকর করে তোলা সম্ভব।

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়