Search
Close this search box.

সোমবার- ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রামাদানের গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল ও বিধান – পর্ব ৩

রামাদানের গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল ও বিধান

গত পর্বের ধারাবাহিকতায় এবার আলোচনা করা হবে রোযার বিষয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল ও বিধান সম্পর্কে।

দুর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তির রোযার বিধান

মাসআলা ১:

যদি কেউ বার্ধক্যের কারণে রোযা রাখতে সক্ষম না হয়, তবে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি রোযার পরিবর্তে একজন গরিবকে দুই বেলা খাবার খাওয়াতে হবে অথবা প্রায় পৌনে দুই কেজি গমের মূল্য সদকা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:

“আর যাদের রোযা রাখা অত্যন্ত কষ্টকর তারা ফিদয়া—একজন মিসকীনকে খাবার প্রদান করবে।” (সূরা বাকারা: ১৮৪; আল-মুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭)

ফিদয়ার বিধান

মাসআলা ২:

যে বৃদ্ধ বা অসুস্থ ব্যক্তি রোযা রাখার সামর্থ্য নেই এবং ভবিষ্যতে কাযা করার সম্ভাবনাও নেই, তিনি রোযার পরিবর্তে ফিদয়া প্রদান করবেন।

ছাবেত বুনানী (রাহ.) বলেন, “আনাস ইবনে মালেক (রা.) যখন বার্ধক্যের কারণে রোযা রাখতে পারতেন না, তখন তিনি রোযা না রেখে (ফিদয়া হিসেবে) খাবার দান করতেন।” (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস: ৭৫৭০)

ফিদয়া কীভাবে প্রদান করতে হবে?

মাসআলা ৩:

এক রোযার পরিবর্তে এক ফিদয়া ফরজ। এক ফিদয়া হলো,

একজন গরিবকে দুই বেলা পেট ভরে খাবার খাওয়ানো অথবা তার সমমূল্যের খাদ্যশস্য বা অর্থ প্রদান করা। সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব (রাহ.) বলেন, “এই আয়াত রোযা রাখতে অক্ষম বৃদ্ধের জন্য প্রযোজ্য।”

(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস: ৭৫৮৫; আল-মুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৬)

মাসআলা ৪:

যাদের জন্য রোযার পরিবর্তে ফিদয়া দেওয়ার অনুমতি রয়েছে, তারা চাইলে রমযানের শুরুতেই পুরো মাসের ফিদয়া প্রদান করতে পারেন। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭)

ফিদয়া দেওয়ার বিধান অন্যান্য ব্যক্তিদের জন্য

মাসআলা ৫:

দুর্বল বৃদ্ধ ও এমন অসুস্থ ব্যক্তি, যাদের ভবিষ্যতে রোযার শক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তারা ফিদয়া প্রদান করবেন। তবে অন্যান্য ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ফিদয়া নয়, বরং পরবর্তী সময়ে কাযা করতে হবে।

যেমন: মুসাফির, গর্ভবতী নারী, দুগ্ধদানকারী মা।

যদি ওজরের (অসুবিধার) কারণে রোযা রাখতে না পারেন, তবে পরে তা কাযা করে নিতে হবে। তাদের জন্য ফিদয়া দেওয়ার প্রয়োজন নেই। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৩-৪২৪; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/২৫৫)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “গর্ভবতী নারী ও শিশুকে স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য রমযানে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে তারা ফিদয়া আদায় করবে না; বরং রোযাগুলো কাযা করে নিবে।” (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস: ৭০৬৪)

মাসআলা ৬:

যদি কোনো ব্যক্তি রোযার কাযা সম্ভব না করে মৃত্যুবরণ করে, তবে মৃত্যুর পূর্বে ফিদয়া দেওয়ার অসিয়ত (উইল) করে যাওয়া জরুরি। যদি অসিয়ত না করে যায়, তবে ওয়ারিশগণ চাইলে তার পক্ষ থেকে ফিদয়া প্রদান করতে পারে। তবে এটি তাদের জন্য আবশ্যক নয়। যদি ওয়ারিশরা ফিদয়া দিতে চায়, তবে তাদের নিজ নিজ অংশ থেকে তা দিতে হবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে ফিদয়া দেওয়া যাবে না। (রদ্দুল মুহতার ২/৪২৪-৪২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭)

মাসআলা ৭:

এক রোযার ফিদয়া একজন মিসকীনকে দেওয়া উত্তম। তবে একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া হলেও ফিদয়া আদায় হবে। একইভাবে, একাধিক রোযার ফিদয়া এক মিসকীনকেও দেওয়া যেতে পারে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “যে বৃদ্ধ রোযা রাখতে সক্ষম নন, তিনি রোযা না রেখে প্রতিদিন একজন মিসকীনকে আধা সা’ (প্রায় পৌনে দুই কেজি) গম প্রদান করবেন।” (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস: ৭৫৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭)

আগের পর্ব: রামাদানের গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল ও বিধান – পর্ব ২

লেখক: ইবনে আবদুল্লাহ

 

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়