শুক্রবার- ১১ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইসলামি বিধিবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ইসলামি বিধিবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন। মানব জীবনে পরিপূর্ণতা অর্জনের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে ইসলামী দর্শন। এ বসুন্ধরায় মানব জীবন বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। জীবন প্রবাহে নানা জঞ্জাল ও পদস্থলনের সম্ভাব্য অন্তরায় মানব জীবনকে করে তোলে দিকভ্রান্ত। জীবন পরিক্রমা মানুষ বড়ই অসহায়। সে আত্মরক্ষার জন্য অপরের মুখাপেক্ষী। তার এই পরমুখাপেক্ষিতা তাকে সঠিক পথে চলার ব্যাপারে অনিশ্চয়তার মধ্যে  ফেলে দেয়। তবে মানুষের স্রষ্টা পরম করুণাময় আল্লাহ্ তা’আলা সঠিক পথে পরিচালনার জন্য হিদায়াতের মশাল সহকারে যুগে যুগে অনেক নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। আর এই হিদায়াতের ধারাবাহিকতার পরিপূর্ণতা লাভ করে হযরত মুহাম্মাদ (সা)-এরআবির্ভাবের ফলে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুল কায়েনাত সৃজন করেছেন ভালোবেসে। মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। তাই মানুষ ‘আবদুল্লাহ’ তথা আল্লাহর বান্দা, দাস বা গোলাম, যে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জিন ও ইনসানকে আমি আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’(সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত ৫৬)। মানুষ খলিফাতুল্লাহ বা আল্লাহর প্রতিনিধি, যে সৃষ্টির সেবায় আত্মনিয়োগ করে, সৃষ্টির লালন ও সংরক্ষণে খোদা প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করবে।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি দুনিয়াতে খলিফা বা প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত ৩০)। মানুষ ‘ওয়ালিউল্লাহ’ বা আল্লাহর প্রিয় বন্ধু। ওই ‘আবদুল্লাহ’ ও ‘খলিফাতুল্লাহ’র দায়িত্বসমূহ পালন করে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’-এর মর্যাদা সমুন্নত হতে পারলে আল্লাহ তাআলা তাকে বন্ধুরূপে বরণ করবেন।

মানুষ যেন তার লক্ষ্যে সফল হতে পারে, সে জন্য আল্লাহ তাআলা যে বিধান দিয়েছেন, তার নাম ইসলাম, যার অর্থ আনুগত্য ও শান্তি স্থাপন। ইসলামি বিধিবিধান শরিয়াহ নামে পরিচিত। শরিয়তের সব বিধানের দর্শন বা অন্তর্নিহিত রহস্য মৌলিকভাবে পাঁচটি, যাকে পরিভাষায় মাকাসিদুশ শরিয়াহ বা শরিয়তের উদ্দেশ্যাবলি বলা হয়। তা হলো জীবন সুরক্ষা, সম্পদ বা জীবিকা তথা জীবনোপকরণ সুরক্ষা, জ্ঞান সুরক্ষা, বংশ বা প্রজন্মধারা সুরক্ষা, ধর্ম-কর্ম বিশ্বাসের সুরক্ষা।

যেহেতু সব উপলক্ষের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ ও নৈকট্য অর্জন, তাই সব বিধানই ইবাদত। অর্থাৎ আদেশসমূহ প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন এবং নিষেধসমূহ বর্জন ও মূলোৎপাটন। এ অর্থে পুরো ধর্মই ইবাদত আর সব ইবাদত ধর্ম। কিন্তু মুজতাহিদ ফকিহ ও মুসলিম দার্শনিকেরা সাধারণের সহজবোধ্য করার জন্য এই স্তরবিন্যাস ও শ্রেণিবিভাজন করেছেন। যেহেতু ধর্ম ও শরিয়ত প্রায় সমার্থক, ধর্মীয় বিধানসমূহই শরিয়াহ, তাই ওই চার প্রকারের সঙ্গে পঞ্চম প্রকার উল্লেখ না করলেও হয়। কারণ, যা বিভাজন করা হয়, তা বিভাজিত অংশসমূহের শ্রেণিভুক্ত হয় না। তবু ব্যতিক্রম নিয়ম হিসেবে অংশের পরে মূল উল্লেখ করা হয়েছে। (মাকাসিদুশ শরিয়াহ)।

শামীমা সুলতানা

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়