জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। নতুন এই সংশোধনীতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান বাতিল করা হয়েছে এবং পুনর্বহাল করা হয়েছে ‘না ভোট’। পাশাপাশি প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পদের বিবরণ প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ২০২৫ চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর আইন নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আরপিওর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী হলো ইভিএম সংক্রান্ত বিধান বাতিল এবং ‘না ভোট’ পুনর্বহাল করা। এতে কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলেও ভোটাররা চাইলে তাকে ভোট না দেওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রয়োজন হলে সেই আসনে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, “২০১৪ সালের একক প্রার্থীর নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনগণকে প্রকৃত ভোটাধিকারের সুযোগ দিতে আমরা এটি অন্তর্ভুক্ত করেছি।”
সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় এখন থেকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পলাতক আসামিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। জেলা নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা।
প্রত্যেক প্রার্থীকে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে প্রাপ্ত আয় ও সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক হবে। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, জনগণ যেন সহজেই প্রার্থীদের আর্থিক অবস্থা জানতে পারেন।
আরও বলা হয়, নির্বাচনী জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলকে ৫০০ টাকার বেশি অনুদান বা চাঁদা দিলে তা ব্যাংকিং চ্যানেলেই গ্রহণ করতে হবে, এবং অনুদানদাতাকে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে।
এছাড়া বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ভোটার ও নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ডাক ভোটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে, এবং কোনো এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে পুরো ভোট বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।
নতুন সংশোধনীতে জোটের প্রার্থীদের প্রতীক ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনতে অতিরিক্ত বিধান সংযোজন করা হয়েছে, যাতে ভোটাররা সহজেই বুঝতে পারেন কোন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।





















