মুনিরা ফাতেমা সাংবাদিকতা করেন। এই শহরে পেশাগত কারণে ঘুরতে গিয়ে লোকাল বাস থেকে শুরু করে মেলা, সমাবেশ কিংবা মিছিলে বহুবার তাঁর শরীরকে ছুঁয়ে গেছে অনাকাঙ্ক্ষিত হাত। কখনো প্রতিবাদ করেছেন, কখনো আবার নারীজন্মের কষ্টে ভেতরে-ভেতরে শেষ হয়ে গেছেন।
সেই মুনিরা যেদিন ছেলেসন্তানের জন্ম দিলেন, অস্ত্রোপচারকক্ষে আধো ঘুম–আধো জাগরণের মধ্যে প্রথম দেখলেন ছেলের মুখ; সেদিন কেবল একটি প্রার্থনাই করেছিলেন। সেটি হলো, কোনো মেয়ের শরীরে যেন না লাগে তাঁর ছেলের অযাচিত স্পর্শ।
এই সংবাদকর্মী বলেন, তিনি তাঁর আট বছরের ছেলেকে গুড টাচ–ব্যাড টাচ শিখিয়েছেন। ওকে বলেছেন, কারও অনুমতি না নিয়ে তাকে জড়িয়ে না ধরতে, আদর করেও যেন মেয়েবন্ধুকে চুমু না দেয়; সেটাও। ধীরে ধীরে ছেলের মধ্যে পরিমিতিবোধটা ঢুকিয়ে দিতে চান তিনি।
মুনিরা ফাতেমা সাংবাদিকতা করেন। এই শহরে পেশাগত কারণে ঘুরতে গিয়ে লোকাল বাস থেকে শুরু করে মেলা, সমাবেশ কিংবা মিছিলে বহুবার তাঁর শরীরকে ছুঁয়ে গেছে অনাকাঙ্ক্ষিত হাত। কখনো প্রতিবাদ করেছেন, কখনো আবার নারীজন্মের কষ্টে ভেতরে-ভেতরে শেষ হয়ে গেছেন।
সেই মুনিরা যেদিন ছেলেসন্তানের জন্ম দিলেন, অস্ত্রোপচারকক্ষে আধো ঘুম–আধো জাগরণের মধ্যে প্রথম দেখলেন ছেলের মুখ; সেদিন কেবল একটি প্রার্থনাই করেছিলেন। সেটি হলো, কোনো মেয়ের শরীরে যেন না লাগে তাঁর ছেলের অযাচিত স্পর্শ।
এই সংবাদকর্মী বলেন, তিনি তাঁর আট বছরের ছেলেকে গুড টাচ–ব্যাড টাচ শিখিয়েছেন। ওকে বলেছেন, কারও অনুমতি না নিয়ে তাকে জড়িয়ে না ধরতে, আদর করেও যেন মেয়েবন্ধুকে চুমু না দেয়; সেটাও। ধীরে ধীরে ছেলের মধ্যে পরিমিতিবোধটা ঢুকিয়ে দিতে চান তিনি।
ছেলেকে শেখান প্রথম পাঠ
ছেলে বা মেয়েশিশুকে ছোটবেলা থেকেই তার শরীর সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার ব্যাপারে জোর দেন বিশেষজ্ঞরা। সে জন্য প্রত্যেক শিশুকেই তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ চেনাতে ও অঙ্গের নাম শেখাতে বলা হয়।
এরপর শিশুকে ধারণা দিতে হবে তার ব্যক্তিগত অঙ্গ সম্পর্কে। তার শরীরের ব্যক্তিগত অংশে যেন কেউ স্পর্শ করতে না পারে, সেটা বলার পাশাপাশি এটাও বলতে হবে যে সে যেন অন্য কারও ব্যক্তিগত অংশে স্পর্শ না করে। যখন শিশু কোথাও অনিরাপদ বোধ করবে, সঙ্গে সঙ্গে সে তার অভিভাবককে তা জানাবে; তার সঙ্গে এমন আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
ছেলেশিশুকে বোঝাতে হবে, কোনো মেয়ের শরীরের কোথাও অনুমতি ছাড়া স্পর্শ করা যাবে না। যখন একটি ছেলেশিশু কৈশোরের দিকে এগোয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার শরীরে ও মানসিকতায় কিছু পরিবর্তন আসে। সেই স্পর্শকাতর সময়ে মা-বাবাকে তার পাশে থাকতে হবে। ছেলেসন্তানের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে। যেন অন্য কোনো অনিরাপদ উৎস থেকে সে ভুল তথ্য পেয়ে না যায়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
মায়ের অভিজ্ঞতা
তিন ছেলের মা গুলশান নাসরিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের মধ্যে অন্যকে বিশেষ করে নারীকে সম্মান করতে শেখানোর কথা।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশানের ছেলেরা বড় হয়ে গেছেন, সংসার করছেন, চাকরিক্ষেত্রেও সফল। তিনি ছোটবেলা থেকেই নারী-পুরুষের মধ্যে সমতার বিষয়টি সন্তানদের মধ্যে বুনে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের বোঝাতেন, তারা যেমন মাকে শ্রদ্ধা করে, তেমনি করে অন্য নারীদেরও সম্মান করতে হবে।
গুলশান নাসরিন বলেন, ‘আমি তাদের অনেক উদাহরণ দিয়ে, গল্প বলে বুঝিয়েছি। মহীয়সী নারীদের জীবনী পড়ে শুনিয়েছি। মেয়েদের সম্মান কেন করতে হবে, তা ব্যাখ্যা করেছি।’
একটু বড় হওয়ার পর ছেলেদের শিখিয়েছেন, কোনো মেয়েকেই তার অনুমতি ছাড়া বা তার ইচ্ছা ছাড়া স্পর্শ করা যাবে না।
সম্প্রতি ভারতে এক চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে হয়রানি, পথে-ঘাটে অযাচিত স্পর্শের নানা ঘটনা ঘটে।
এ অবস্থায় মেয়েসন্তানকে গুড টাচ–ব্যাড টাচ শেখানোর পাশাপাশি আত্মরক্ষা শেখাতেও উদ্যোগী হচ্ছেন মা–বাবারা।
দুই মেয়ের মা চমন হোসেন বলেন, ‘আমরা নাহয় মেয়েকে আত্মরক্ষার কৌশল শিখিয়ে দিলাম, কীভাবে ভিড় বাঁচিয়ে চলতে হয়, শেখালাম। কিন্তু ছেলেদেরও তো দৃষ্টি সংযত রাখতে শেখাতে হবে। তাকেও শেখাতে হবে যে অনুমতি ছাড়া কোনো মেয়েকে ছোঁয়া যায় না। তাহলেই না সমতা আসবে, আমাদের মেয়েরা নিরাপদ হবে।’
ছোটবেলা থেকেই হোক সমতার শুরু
ছেলেসন্তানকে কীভাবে দিতে হবে এই পাঠ? জানতে চেয়েছিলাম মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইডের মাস্টার ট্রেইনার ডা. নাজিয়া হকের কাছে।
নাজিয়া হক অনি বলেন, আলাদা করে ছেলেদের শেখানোর কিছু নেই। ছেলে-মেয়ে সব শিশুকেই ছোটবেলা থেকে শেখাতে হবে যে প্রত্যেক মানুষ আলাদা। প্রত্যেকের চারপাশে একটা সীমানা দেয়াল থাকে, নিজস্ব জায়গা থাকে। সেটার সম্মান করতে হবে। কারও ব্যক্তিগত বলয়ে প্রবেশ করা ঠিক নয়। এই ব্যক্তিগত বলয়ের মধ্যে তাকে ছোঁয়া বা স্পর্শ করার বিষয়টিও থাকবে।
অর্থাৎ, প্রত্যেক শিশুকেই শেখাতে হবে যে ছেলে-মেয়েনির্বিশেষে তার অনুমতি ছাড়া স্পর্শ করা উচিত নয়। এটা ভদ্র আচরণ নয়।
জিনগতভাবে বেশির ভাগ ছেলের মধ্যেই ‘আগ্রাসী মনোভাব’ থাকে জানিয়ে ডা. নাজিয়া হক বলেন, ‘আমাদের দেশে ছেলেরা এমনভাবে বড় হয় যেন তারা চাইলেই সব করতে পারে। যা ইচ্ছা, তা–ই বলতে পারে। উল্টোদিকে মেয়েদের নম্র-ভদ্র করে গড়ে তোলা হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে।
‘আপনি দেখবেন, মেয়েরা কিন্তু হুট করে কারও শরীরে হাত দেয় না বা কোনো ছেলের শরীরে অযাচিতভাবে স্পর্শ করে না। কারণ, তাদের ছোটবেলা থেকে এটা শেখানো হয়। তাহলে একটা ছেলেকেও কেন সেটা শেখানো হবে না? কেন তাদের জন্যও সীমারেখা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে না?’
তাই ছোটবেলা থেকেই প্রতিটি শিশুকে নিজের ব্যক্তিগত বলয়ের সুরক্ষার পাশাপাশি অন্যের বলয়কে সম্মান করা শেখাতে হবে। আর এটা যত ছোটবেলা থেকে করা যায়, ততই মঙ্গল।