‘ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ’ অথবা ‘আইবিডি’ হলো পেটের প্রদাহজনিত রোগ। সহজ করে বলতে গেলে এতে দীর্ঘ মেয়াদে পেটে ব্যথা থাকে। এ রোগটির দুটি ধরন আছে। আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রনস ডিজিজ।
আলসারেটিভ কোলাইটিস প্রধানত বৃহদন্ত্রে প্রদাহ বা আলসার তৈরি করে থাকে। ক্রনস ডিজিজে আক্রান্ত হতে পারে পরিপাকতন্ত্রের যেকোনো অংশ (মুখ থেকে পায়ুপথ)। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু ক্ষুদ্রান্ত্র অথবা বৃহদন্ত্র অথবা উভয় অংশই আক্রান্ত হতে পারে।
লক্ষণ
• ক্রনস ডিজিজে আক্রান্ত রোগী দীর্ঘমেয়াদি পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, রক্তমিশ্রিত পায়খানা, বদহজম, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন।
• মলদ্বারের ফিস্টুলা, অন্ত্রের ফিস্টুলা, চোখ, ত্বক ও অস্থিসন্ধির প্রদাহ হতেও দেখা যায়।
• রোগ জটিল আকার ধারণ করলে অন্ত্র সরু হয়ে গিয়ে পেট ফুলে যেতে পারে। কখনো কখনো অন্ত্র ছিদ্র হয়ে প্রচণ্ড পেটব্যথা ও পেট ফোলা নিয়েও রোগী চিকিৎসকের কাছে আসতে পারেন।
• আলসারেটিভ কোলাইটিসে দীর্ঘমেয়াদি রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
• রোগের জটিলতা হিসেবে মলদ্বারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেট ফুলে যাওয়া, কোলন ক্যানসার ইত্যাদি সমস্যাও হতে পারে।
ঝুঁকি
• ৩০ বছরের কম বয়সীরা রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয়।
• শ্বেতাঙ্গদের এই রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে এটি যে কারও হতে পারে।
• কারও নিকটাত্মীয় যেমন মা–বাবা, ভাইবোন এই রোগে আক্রান্ত হলে তারও আইবিডিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
• ধূমপান ক্রনস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
• কিছু ওষুধ (ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ আইবুপ্রোফেন, নেপ্রোক্সেন সোডিয়াম, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম) সেবনের ফলে আইবিডি আক্রান্ত রোগীদের উপসর্গ বৃদ্ধি পায়।
চিকিৎসা ও করণীয়
• আইবিডির চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, প্রায় সারা জীবন ধরেই চালাতে হয়। এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ না হলেও নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
• আইবিডির চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি–ডায়রিয়া, অ্যান্টি–স্প্যাসমোডিক, অ্যামিনোস্যালিসাইলেটিস, কর্টিকসটেরয়েডস, ইমিউনোমডুলেটরি ও বায়োলজিকস–জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
• রোগের জটিলতায় পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ অপসারণের জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
• নিয়মিত ওষুধ সেবন ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পাশাপাশি কাউন্সেলিং রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
• রোগের কোনো লক্ষণ না থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতে হবে। জটিলতা দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
লেখক: ডা. শারমিন তাহমিনা খান, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগবিশেষজ্ঞ, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা