শনিবার- ১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সৌরজগতের নতুন রহস্য—কাইরনের বলয় নিয়ে উন্মোচিত অজানা তথ্য

kaironer-notun-boloy-abishkar
ছবি: সংগৃহীত

সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনির নাম এলেই মনে পড়ে তার উজ্জ্বল বলয়ঘেরা রূপ। কোটি কোটি বরফকণা ও ক্ষুদ্র পাথরের টুকরোর সমন্বয়ে গঠিত সেই বলয় হাজার বছর ধরে জ্যোতির্বিদদের মুগ্ধ করেছে। এবার শনি ও ইউরেনাস গ্রহের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত বরফময় মহাজাগতিক বস্তু কাইরনকে ঘিরেও নতুন বলয়ের অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষকদের মতে, এই আবিষ্কার সৌরজগতের ছোট বস্তুর চারপাশে বলয় গঠনের প্রক্রিয়া ও তার বিবর্তন সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি দেবে।

কাইরন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ক্ষুদ্র গ্রহাণু বা মাইনর প্ল্যানেট, যা “সেন্টর” নামে পরিচিত এক বিশেষ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এটি শনি ও ইউরেনাসের কক্ষপথের মাঝামাঝি অঞ্চলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট এই বস্তুর একটি পূর্ণ কক্ষপথ সম্পন্ন হতে সময় লাগে প্রায় ৫০ বছর।

সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কাইরনের চারপাশে চারটি পৃথক বলয় রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলয়গুলোতে ছড়িয়ে থাকা বস্তুকণা বিশ্লেষণ করছেন, যা এর ভৌত ও গতিশীল প্রকৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে।

ব্রাজিলের পিকো দস দিয়াস অবজারভেটরিতে ২০২৩ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ২০১১, ২০১৮ ও ২০২২ সালের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে তুলনা করেন। সেই তথ্য একত্র করে তৈরি করা নতুন মডেলে দেখা যায়কাইরনের কেন্দ্র থেকে যথাক্রমে ২৭৩, ৩২৫ ও ৪৩৮ কিলোমিটার দূরত্বে তিনটি ভেতরের বলয় রয়েছে, আর প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার দূরে চতুর্থ ও বহিঃস্থ বলয়টি প্রথমবার শনাক্ত করা হয়েছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কাইরনের ভেতরের বলয়গুলো ঘূর্ণায়মান ধূলিকণার একটি ডিস্কের ভেতরে অবস্থান করছে, যা একটি জটিল ও গতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে।

ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি-পারানার বিজ্ঞানী ব্রাগা রিবাস বলেন, কাইরনের এই বলয় আবিষ্কার সেন্টর ক্যারিক্লো, নেপচুনের পারের বরফময় গ্রহ হাউমেয়া ও কুয়াওআরের মতো বলয়বেষ্টিত ছোট বস্তুর তালিকায় আরও একটি নাম যুক্ত করল।

উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে বিজ্ঞানী চার্লস কোয়াল কাইরন আবিষ্কার করেন। এটি ছিল প্রথম সেন্টর শ্রেণিভুক্ত বস্তু। প্রথমে কাইরনকে গ্রহাণু হিসেবে গণ্য করা হলেও, পরবর্তীতে এর কক্ষপথ ও আচরণ ধূমকেতুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় বিজ্ঞানীরা একে গ্রহাণু ও ধূমকেতুর এক হাইব্রিড রূপ বলে মনে করেন। এটি মাঝে মাঝে ধূলিকণার মেঘ বা কোমা তৈরি করতে পারে, যদিও ধূমকেতুর মতো স্পষ্ট লেজ তৈরি করে না।

আরও পড়ুন

সম্পর্কিত আরো খবর

জনপ্রিয়